শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

শিক্ষাঙ্গনে রক্তঝরা সকাল: অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ১১

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
  • ২৭ বার

প্রকাশ: ১০ ই জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

অস্ট্রিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রাজ শহরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও ভীতিকর ঘটনা। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সশস্ত্র এক বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং স্কুলের সহকারী কর্মী রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই হামলা ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ১০টা নাগাদ গ্রাজ শহরের একটি সরকারি স্কুলে বন্দুকধারী প্রবেশ করে এবং হঠাৎ করেই নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির শব্দে পুরো স্কুল এলাকা আতঙ্কে অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে, এবং অনেকেই টেবিলের নিচে, শ্রেণিকক্ষে লুকিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে।

স্থানীয় পুলিশ জানায়, হামলার পরপরই তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং স্কুলটিকে ঘিরে ফেলে। একটি বিশেষ কৌশলগত অভিযানের মাধ্যমে হামলাকারীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। সন্দেহভাজন ওই বন্দুকধারীর পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে তার বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সে ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ছিল এবং মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলা শুধু একটি স্কুল নয়, গোটা জাতির শিক্ষাব্যবস্থার শান্ত পরিবেশ ও শিশুদের নিরাপত্তায় সরাসরি আঘাত। এটি একটি জাতীয় শোকাবহ মুহূর্ত।” তিনি বলেন, সরকার দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে হামলার পেছনে দায়ী কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

গ্রাজ শহরের মেয়র এলেনা ফিশার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের শহরে এরকম হামলা নজিরবিহীন। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার যারা এই ভয়াবহতার শিকার হয়েছেন, আমরা তাদের পাশে আছি। শহরের সব স্কুলে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে এই হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং জার্মানির চ্যান্সেলর পৃথক বিবৃতিতে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অস্ট্রিয়ার জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তারা ইউরোপজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ট্রিয়ায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখার নিয়ম ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা সহজ, বিশেষ করে শিকার ও খেলাধুলার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজতর। তবে এই হামলার পর দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলছেন, তরুণদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানোর যে সহজতা, তা এখন জাতীয় নিরাপত্তার হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ঘটনার পর এক জরুরি নির্দেশনায় জানায়, গ্রাজ শহরের সব স্কুলে আগামী তিন দিন শ্রেণিকলাস স্থগিত থাকবে। মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মনোচিকিৎসক এবং কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়েছে। শিক্ষকদের জন্যও পৃথকভাবে মানসিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও অস্ট্রিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং এ ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায়। অস্ট্রিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা রাখছেন।

এই হামলা ইউরোপের সাম্প্রতিক স্কুলভিত্তিক সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নতুন করে উদ্বেগ বাড়াল। ২০২৪ সালে জার্মানির হামবুর্গ এবং ২০২৩ সালে ফ্রান্সের লিল শহরে স্কুলে হওয়া দুটি হামলার পর এই ঘটনা আবারও ইউরোপজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার দাবি জোরালো করেছে।

গ্রাজ শহরের সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় হতবাক ও ব্যথিত। স্কুলের বাইরে ফুল, মোমবাতি এবং বার্তা রেখে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। আকাশ ভারী, বাতাস নিস্তব্ধ—আর একটি শহর শোকে নুয়ে পড়েছে। এখন শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে—আর কত প্রাণ ঝরলে থামবে এই সহিংসতা?

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫