৩০ মে ২০২৫, আজকের খবর অনলাইন, নিজস্ব সংবাদদাতা – হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ডেবরাবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নারী ও শিশুসহ মোট ২২ জনকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আটক করেন। বিজিবি সূত্র জানায়, আটককৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী এবং ৫ জন শিশু রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটকদের সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে ২৬ মে চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ একইভাবে শিশুসহ ১৮ জন বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ঠেলে দেয়। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টায় কালেঙ্গা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। বিজিবির অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এবং ভারতে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
একই দিনে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, চম্পারা এবং জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী শিশুসহ মোট ২৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। আজ শুক্রবার সকালে বিজিবি তাদের আটক করে। রাজকি বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম জানান, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টায় সীমান্ত থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে চার পুরুষ, দুজন নারী এবং চার শিশু রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এবং বিএসএফ ভোরের দিকে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
আটককৃতদের তথ্য অনুযায়ী, তারা জীবিকার সন্ধানে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে থেকে হরিয়ানা রাজ্যে দিনমজুরের কাজ করতেন। ৯ মে সেখানকার পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। এই বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪৬-বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া এবং ৫২-বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই ধরনের জোরপূর্বক ঠেলাঠেলি ও ‘পুশ ইন’ ঘটনা সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিজিবি এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ এবং ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা সীমান্তের এমন ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য মানবিক এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। সীমান্তে শিশু ও নারীদের উপর এই ধরনের কার্যকলাপ ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বিজিবি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।