প্রকাশ: ১লা জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ঘটে যাওয়া এক অনির্ধারিত সামরিক সংঘর্ষ ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রবীণ নেতা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুব্রামানিয়ান স্বামী এক বিস্ফোরক মন্তব্যে জানিয়েছেন যে, প্রায় চার সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী চীনা তৈরি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের পাঁচটি ফাইটার জেট গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

এই বক্তব্য প্রকাশ পাওয়ার পর ভারতের একাধিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে শনিবার দুপুরে এই খবর ছাপা হলেও সন্ধ্যার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনগুলো হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের যে সকল অনলাইন সংবাদপত্র ও নিউজ পোর্টাল স্বামীর এই মন্তব্য ও যুদ্ধের বাস্তবতা ঘিরে সংবাদ প্রচার করেছিল, সেগুলো এখন ভারতে আর খোলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে একাধিক পর্যবেক্ষক।

বিষয়টি ঘনীভূত হয় আরও কয়েক ঘণ্টা পর ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান যখন স্বীকার করেন যে, ভারতীয় ফোর্স কিছু ফাইটার জেট হারিয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে কোনো সংখ্যাগত তথ্য দেননি। চৌহান বলেন, “আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি, তবে এই মুহূর্তে তাদের সংখ্যা প্রকাশ করা যাবে না।”

এই ঘটনার সূত্রপাত এক মাস আগে, যখন সীমান্তবর্তী উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ শুরু হয়। সেই রাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স-২৪-এ এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। এই সংবাদের পর বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে অনেকেই এটিকে “ভুয়া খবর” বলে উড়িয়ে দেয়। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিক এবং সামরিক সূত্র থেকেও সে দাবির সত্যতা স্বীকার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য ও সামরিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এবং এতে চীনের পরোক্ষ ভূমিকা — যা এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে।

সুব্রামানিয়ান স্বামীর এই বক্তব্য নতুন নয়। এর আগেও ২০১৬ সালে ভারতের আলোচিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছিল। ভারত দাবি করেছিল, তারা পাকিস্তানের বালাকোটে এক মাদ্রাসার উপর ২ হাজার পাউন্ডের বোমা ফেলেছে এবং এতে প্রায় ৩০০-৩৫০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে একটি অস্ট্রেলিয়ান স্যাটেলাইট বিশ্লেষণকারী সংস্থা জানায়, বোমাটি জনবসতি নয়, বরং ফাঁকা জায়গা বা বনাঞ্চলে পড়েছিল এবং উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এসব ঘটনায় স্পষ্ট হয় যে, অনেক সময় রাজনৈতিক বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবতাকে মিলিয়ে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে সুব্রামানিয়ান স্বামীর মতো একজন হিন্দুত্ববাদী নেতা যখন ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষতির কথা অকপটে স্বীকার করেন, তখন সেই বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস বলেই বিবেচিত হতে পারে।

পাকিস্তান কিংবা ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক যৌথ বিবৃতি না আসলেও, দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে এই ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতির অবনতি হলে এটি আবারো দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এই সংবাদের পেছনে থাকা তথ্যগুলো মূলত বিশিষ্ট বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য্যর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আজকের খবর অনলাইন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন উৎসে অনুসন্ধান চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।