শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

শাটডাউন শেষে সচল রাজস্বপ্রবাহ: কাজে ফিরেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার
শাটডাউন শেষে সচল রাজস্বপ্রবাহ: কাজে ফিরেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন

টানা কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচির পর অবশেষে আবার সচল হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেড় মাস ধরে চলা আন্দোলনের উত্তাল পর্ব পেরিয়ে, যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা সম্মিলিত আন্দোলন শেষে, সোমবার (৩০ জুন) সকালে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে দেশের রাজস্বপ্রবাহ।

এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সকাল ৯টা থেকেই এনবিআরের বিভিন্ন শাখা, দপ্তর ও কাস্টমস হাউজসহ সব ইউনিটে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। আজ অর্থবছরের শেষ দিন, তাই রাজস্ব আহরণ ও ট্রেজারিতে অর্থ জমার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনবিআর সূত্র বলছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণ উপস্থিতিতে আজকের দিনটি রাজস্ব আহরণের চূড়ান্ত চেষ্টার দিন হিসেবে কাজ করছে।

দীর্ঘদিনের শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দেখা দেয় বিপর্যয়। স্থবির হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ প্রায় সব স্থলবন্দর। পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গত দুই দিন ধরে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বৈঠক ও এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অবশেষে রবিবার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।

যদিও কাজ শুরু হলেও পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য এখনও ফিরেনি এনবিআরের অন্দরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকে এখনও গত কয়েক দিনের আন্দোলনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। কেউ কেউ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য বদলির আতঙ্কেও রয়েছেন। বিশেষ করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সামনের সারির নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, চলমান আন্দোলনের সূচনা হয় গত ১২ মে সরকারের একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে। অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের দাবি, এর মাধ্যমে নীতিগত ও কার্যনির্বাহী দায়িত্ব পৃথক করা হবে, যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের একটি অংশ। তবে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

তাদের আশঙ্কা, নতুন বিভাগের শীর্ষ পদগুলোতে রাজস্ব ক্যাডারের বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এনবিআরের দাবি, প্রশাসন ক্যাডার নয়, বরং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজস্ব কর্মকর্তাদেরই এ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া উচিত। এসব ইস্যুতে মতপার্থক্য থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণের দাবিও জানান।

এরই মধ্যে সরকার এনবিআরের সেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করে এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের কঠোর অবস্থান এবং ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ—দুইয়ের মিলিত চাপে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পেছনে সরে আসেন কর্মকর্তারা।

গতকাল রবিবার রাতে আন্দোলনকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট মহলসহ গোটা অর্থনৈতিক খাত।

এখন প্রশ্ন হলো, আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলেও সমস্যার সমাধান কী মিলেছে? এনবিআরের বহু কর্মকর্তা মনে করছেন, আন্দোলনের মূলে থাকা মূল দাবি—সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত রাজস্ব কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব নিশ্চিত না করা হলে সামনে আবারও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তাদের মতে, শুধু একটি মুহূর্তিক সমঝোতা নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমাধান ও আস্থার ভিত্তি গড়া।

তবে আপাতত রাজস্ব বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসাই বড় স্বস্তির খবর। অর্থবছরের শেষ দিনে যে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণের প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, ব্যবসায়ী এবং এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে চলমান আলোচনা অব্যাহত থাকলে হয়তো একটি টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে এ জন্য প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি আস্থা, বোঝাপড়া এবং বাস্তবতার আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই আন্দোলন এবং তার প্রভাব দেশের প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিবেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি বড় বার্তা। শুধু এনবিআর নয়, সমগ্র সরকারি কাঠামোর ক্ষেত্রেই এটি এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে—কীভাবে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক সংস্কার ছাড়া উন্নয়ন প্রক্রিয়া ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। এখন সময় সেই শিক্ষা গ্রহণের।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫