শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে বাংলাদেশের কৌশলী চাল: গম ও উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৪৮ বার
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে বাংলাদেশের কৌশলী চাল: গম ও উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ

প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে চলমান টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা এবার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্কের বোঝা কমাতে বাংলাদেশ সরকার একাধিক বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকার-সরকার পর্যায়ে (জিটুজি) গম এবং উড়োজাহাজ কেনা। এমনকি দেশটির তুলা আমদানির প্রক্রিয়াও সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে ২৯ জুন নির্ধারিত দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে সামনে রেখে বাংলাদেশের কৌশলগত প্রস্তুতি।

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে। তবে তাৎক্ষণিক চাপ প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র ৯ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৯ জুলাই। এ সময়সীমার মধ্যেই বাংলাদেশকে কৌশলী অবস্থান নিতে হয়েছে যাতে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যায়।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসানের সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে তুলনামূলক কম দামে গম পাওয়া সম্ভব, বাংলাদেশ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যমান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের কাছে বাংলাদেশের সদিচ্ছার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু গম নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িং-এর কাছ থেকেও বিমান কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ এই পদক্ষেপগুলোকে দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বের এক প্রতীক হিসেবে দেখাচ্ছে, যার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নিজের অবস্থানকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জুনের বৈঠকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত আশা করছে। একাধিক দ্বিপক্ষীয় ও অনলাইন বৈঠকে এরই মধ্যে নানা তথ্য উপস্থাপন ও পর্যালোচনা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস) ছয়টি বিষয়ের ওপর ব্যাখ্যা চায়, যার বিস্তারিত উত্তর ঢাকা প্রেরণ করেছে ৪ জুন। ১৭ জুন উভয় দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি অনলাইন বৈঠকে সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া নিয়েও আলোচনা হয়। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এই খসড়া এখনো গোপন এবং তা প্রকাশের উপযোগী নয়।

এদিকে বাণিজ্য ভারসাম্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এক দশকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করেছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার বাড়িয়ে, যেখানে একই সময় আমদানি বেড়েছে ১২৫ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৩৬ কোটি ডলার এবং আমদানির পরিমাণ ২২১ কোটি ডলার, অর্থাৎ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৬১৫ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য থেকে বিপুল পরিমাণ সুবিধা নিচ্ছে—এই তথ্যটিও আলোচনার একটি মূল পয়েন্ট হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে দেশটির কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ আমদানিতে শূন্য শুল্ক অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসাসামগ্রীর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাবও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯০টি পণ্য তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত এবং শিগগিরই আরও ১০০ পণ্য এই তালিকায় যুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশের কৌশল বাস্তবমুখী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে ইতিবাচক কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ৯ জুলাইয়ের আগে কোনো কিছু চূড়ান্ত বলা যাবে না। মূল সিদ্ধান্ত সেদিনই জানা যাবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বাস্তবভিত্তিক বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে দৃঢ় করবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে। এখন শুধু অপেক্ষা ২৯ জুনের বৈঠক ও ৯ জুলাইয়ের ঘোষণার—যা হয়তো বাংলাদেশের জন্য এই বাণিজ্য সংকটের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫