শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থপ্রবাহ বাড়ছে কেন: বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, করনীতির পুনর্বিন্যাস নাকি অন্য কিছু?

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ১০৮ বার
সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থপ্রবাহ বাড়ছে কেন: বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, করনীতির পুনর্বিন্যাস নাকি অন্য কিছু?

প্রকাশ: ২৫শে জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন

গোপনীয়তার প্রতীক হিসেবে একসময় সুইস ব্যাংকগুলোর পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। কর ফাঁকি, অবৈধ লেনদেন ও কালো টাকার নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে এগুলোর খ্যাতি ছিল সুপরিচিত। কিন্তু আধুনিক অর্থনৈতিক বিশ্বে নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি এবং আন্তর্জাতিক অর্থপ্রবাহে স্বচ্ছতার চাহিদা বাড়ায় এখন এই ব্যাংকগুলো আর আগের মতো গোপন নয়। তথাপি ভারতীয় নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রাখা নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—এই অর্থের উৎস কী? এর পেছনে উদ্দেশ্য কী?

২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা চমকে ওঠার মতো। ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থ আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারে। অথচ খুচরা বা ব্যক্তিগত হিসাবের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১১ শতাংশ। এই পার্থক্য থেকেই বোঝা যায়, অর্থপ্রবাহ মূলত ঘটছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। এসব ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি হয় বিদেশি আইন মেনে এবং এগুলো পরিচালিত হয় তুলনামূলকভাবে নমনীয় নীতিমালার আওতায়।

ইকোনমিক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়, ভারতীয়দের এই অর্থপ্রবাহের পেছনে কয়েকটি কারণ সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। প্রথমত, যুক্তরাজ্যের নতুন করনীতির কারণে বহু ধনী ভারতীয় পরিবার ইউরোপ কিংবা আরব আমিরাতে নতুন আবাসের চিন্তা করছে। এই স্থানান্তরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা সম্পদও এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করছে। এই প্রেক্ষাপটে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরকে তারা দেখছে ‘নিরাপদ ও স্থিতিশীল’ গন্তব্য হিসেবে।

ভারতের নামকরা আইন প্রতিষ্ঠান খাইতান অ্যান্ড কোর-এর অংশীদার মইন লাধা বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, মূলত এটি একটি বৈশ্বিক আর্থিক পুনর্বিন্যাস। করনীতির পরিবর্তন, মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা মিলে যেসব পরিবার নিজেদের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখতে চাইছে, তারা সুইস ব্যাংককে বেছে নিচ্ছে অর্থ রাখার জায়গা হিসেবে।

তবে এই চিত্রে একপেশে ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। কারণ ভারতের আয়কর বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সম্প্রতি বেশ কিছু অনাবাসী ভারতীয়কে নোটিশ পাঠিয়েছে এবং বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কালো টাকা ও অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অর্থের বেশিরভাগই ‘প্রকৃতপক্ষে বৈধ’, এবং যেসব ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তারা সেই অর্থ অন্যান্য দেশ থেকে স্থানান্তর করেছেন—সরাসরি ভারত থেকে নয়।

আয়কর বিশ্লেষক ঈশা শেখরির ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক হিসাব এমন বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হয় যেখানে উপকারভোগী ব্যক্তি ভারতীয় হলেও তার নাম সরাসরি দেখা যায় না। নতুন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন নীতিমালার আওতায় এসব হিসাব এখন আরও দৃশ্যমান হচ্ছে। ফলে এই অর্থ হঠাৎই ‘আবিষ্কৃত’ বলে মনে হলেও, বাস্তবে এটি অনেক দিনের গোপন আর্থিক কৌশলের অংশ।

অন্যদিকে, সুইস মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এই দেশকে একটি ‘আর্থিক নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত এক বছরে সুইস ফ্রাঁর দর ডলারের বিপরীতে ৯.৫ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি জি-১০ দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ধনী পরিবারগুলো সম্পদের নিরাপত্তা এবং উত্তরাধিকারের পরিকল্পনায় সুইস ব্যাংককে অন্যতম ভরসার জায়গা হিসেবে বিবেচনা করছে।

এছাড়া, সুইস ব্যাংকগুলো তাদের অতীতের গোপনীয়তার খোলস কিছুটা ঝেড়ে ফেললেও এখনো কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এবং ট্রাস্ট কাঠামো এমনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে ব্যক্তিগত নাম প্রকাশ ছাড়াই সম্পদ সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফলে কর ফাঁকি কিংবা বিতর্ক এড়াতে অনেকেই এই পথ বেছে নিচ্ছেন।

এদিকে শুধু ভারত নয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি ফ্রাঁ—প্রায় ৩৩ গুণ বৃদ্ধি। এটি বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বৈধ অর্থ নয়, বরং সঞ্চয় নীতির কৌশল, রাজনৈতিক নিরাপত্তা, বৈদেশিক স্থিতি ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকেও উদ্ভূত হতে পারে।

এই চিত্রে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে সুইস ব্যাংকগুলো যে এখনো এক বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, তা স্পষ্ট। যদিও স্বচ্ছতা ও তথ্যবিনিময়ের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার কারণে কালো টাকার গন্তব্য হিসেবে এই ব্যাংকগুলোর অতীত ভূমিকা অনেকটাই ক্ষীণ হয়েছে, তথাপি তারা এখনো একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বিভিন্ন দেশের ধনী ও প্রভাবশালী মানুষদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে রয়ে গেছে।

একটি বাংলাদেশ অনলাইন মনে করে, সুইস ব্যাংকগুলোর এই আধুনিক বাস্তবতা আমাদের জন্য শুধুই কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমীকরণ ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিফলনও বটে। ভারতের মতো দেশে অর্থপ্রবাহের বিশ্লেষণ আমাদের নিজেদের দেশীয় আর্থিক নিরাপত্তা ও নীতিনির্ধারণেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫