প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশে এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা আবারও রক্তাক্ত হলো সড়কপথে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের আগে ও পরে মোট ১৫ দিনের যাতায়াত সময়ে সারাদেশে সড়ক, রেল এবং নৌপথ মিলিয়ে ৪১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৭ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১১৯৪ জন।
সোমবার (১৬ জুন) ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তার মতে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, নজরদারির ঘাটতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য এই ভয়াবহ পরিণতির জন্য দায়ী।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদযাত্রার ১৫ দিনে শুধুমাত্র সড়কপথেই ৩৭৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ গেছে ৩৯০ জনের এবং আহত হয়েছেন ১১৮২ জন। পাশাপাশি, রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হন। অন্যদিকে, নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশে নিরাপদ ও আরামদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত কমপক্ষে ৪ দিনের ঈদ পূর্ব সরকারি ছুটি ঘোষণা করা এবং একটি সুদূরপ্রসারী যাতায়াত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা। শুধু তা-ই নয়, তিনি গণপরিবহন খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দেন, বিশেষ করে ছোট আকারের যানবাহনগুলোকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া, দক্ষ চালক তৈরি, যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত রাস্তা নির্মাণ এবং সর্বোপরি সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সংগঠনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঈদের আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে টানা বৃষ্টির কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়, যা যানবাহনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বেপরোয়া ও ক্লান্ত চালকদের কারণে ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে যায় বিশ্রামহীন ও অতিরিক্ত সময় ধরে গাড়ি চালানোর কারণে। এতে অনেক যান খাদে পড়ে বা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, গণপরিবহনে ভাড়া আদায়ের নামে চরম নৈরাজ্য চলেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে অনেক দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস বা ট্রেনের ছাদে, এমনকি খোলা ট্রাক বা পণ্যবাহী পরিবহনে চড়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। যাত্রী হয়রানি, সেবার ঘাটতি এবং দায়িত্বহীন মনোভাব এ বছরের ঈদ যাত্রাকেও অমানবিক ও বিপজ্জনক করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সামগ্রিকভাবে, এই ঈদে সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা দেশের জনসাধারণের নিরাপদ যাত্রার মৌলিক অধিকারকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতা ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে এবারও ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে অনেকে জন্য বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। এখন সময় এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং জনসাধারণের জীবন রক্ষায় কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করার।