প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
জুলাই ও আগস্ট মাসের ছাত্র–জনতা আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সংঘর্ষে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। সোমবার, ১৬ জুন সকালে কারাগার থেকে তাকে সরাসরি ঢাকা ভার্চুয়াল কোর্ট বনাম নাজিম উদ্দিন ভবনে অবস্থিত ট্রাইব্যুনালের কক্ষে আনা হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত শুনানি নেবে।
এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তলব করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের যুক্তি মতে, গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নিষ্ক্রিয় সহযোগিতায় অন্তত এক হাজার চারশ’ ছাত্র–জনতা নিহত হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা এবং তার অনুপ্রেরণা ও প্ররোচনায় এগিয়ে এসেছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আগামী শুনানিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সূচনা হবে। গত ১ জুন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে একই দিন প্রধান আসামি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে মামলাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও সাঁজশাস্ত্র সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি মোতাবেক অগ্রসর হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে পরিণত হতে সাহায্য করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপে প্রতিবাদ–আন্দোলন ব্যাপক রক্তপাতের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। আজকের শুনানি শেষে তদন্তের আরও বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হতে পারে এবং আসামিদের দায়-দায়িত্বের কথা নির্ধারণে নতুন তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত কয়েক মাসে দেশের বিচারব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এই দৃঢ় প্রত্যয় দিয়ে ট্রাইব্যুনাল কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলাটি দেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণ মানুষ এখন অপেক্ষায় আছে—আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে কীভাবে সকল প্রক্রিয়া শেষ হবে, এবং এই মামলার রায়ে কি করে দেশের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা দৃঢ় হবে।