প্রকাশ: ১৫ই জুন ২০২৫ । মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক
বিশ্বযুদ্ধের গোড়ায় আগুন লাগলো মধ্যপ্রাচ্যে, আর তার ধোঁয়ায় হেঁচকি উঠছে গুজরাটে!
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার আগুনে এবার পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সরাসরি ভারতের বাণিজ্যিক খাতেও। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হয়েছে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ হাইফা বন্দর—যেটি অপারেট করে ভারতের ‘প্রিয়পাত্র’ আদানি গ্রুপ। যে বন্দর একসময় মোদির অর্থনৈতিক দূতাবাস ছিল, এখন সেটিই যেন পরিণত হয়েছে ধোঁয়ার গুদামে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ড প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, দূর থেকে ছোঁড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে হাইফা বন্দরের বুকে হুড়মুড়িয়ে পড়ে। বন্দর আর রেললাইন মিলে একাকার! বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের জনপদের ঘুম উড়ে গেছে, আর আদানি গ্রুপের শেয়ারবাজারে বেজেছে অশনির ঘণ্টা।
সত্যি কথা বলতে কী, যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে। কিন্তু তাতে চায়ের কাপ ভাঙলো মোদির প্রিয় শিল্পপতির বেলুনবাড়িতে। বলা যায়, “লড়াই হইছে গাজায়, ক্ষতি হইছে গুজরাটে!”
২০১৯ সালে মোদি-নেতানিয়াহুর মিলনমেলা যখন আকাশ ছুঁয়েছিল, তখন আদানি গ্রুপ হাত পেতে নিয়েছিল হাইফা বন্দরের দায়িত্ব। সেই সময় একদল সমালোচক বলেছিল, ‘ব্যবসা নয়, এটা রাজনৈতিক কাবিননামা।’ আজকের এই ধ্বংসস্তূপ যেন সেই কাবিননামার সাক্ষর মুছে দিল বারুদের ধোঁয়ায়।
অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কনটেইনার পরিবহণ—সবকিছু গুছিয়ে এনেছিল আদানিরা। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে আধুনিক প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে একেবারেই শিশুতোষ, তা এখন বেশ পরিষ্কার।
আর ইরান? তারা তো যেন বাণিজ্য নয়, বার্তা পাঠিয়েছে—‘ইসরায়েলের সঙ্গে প্রেম করো, আর আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কণ্ঠস্বর শুনো।’ ভারত যদিও সরাসরি এই যুদ্ধের অংশ নয়, তবু জোটরাজনীতির গন্ধ, অর্থনৈতিক প্রেম, এবং আদানির মহাকাব্যে তাদের এক পা জড়িয়ে গিয়েছে তৃপ্তির নাচে।
এখন পর্যন্ত আদানি গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে—বন্দরের কিছু কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আদানি দপ্তরে নাকি গৃহযুদ্ধ চলছে: কে ‘বিস্ফোরণ’ শব্দটা প্রথম শুনেছে, তা নিয়ে তর্ক।
বিশ্ব রাজনীতির তপ্ত চুলায় এখন ভারতের কর্পোরেট রুটি পুড়ছে। আর দেশবাসী ভাবছে, “এই সেই হাইফা, যেটা নিয়ে টিভিতে এতদিন উৎসব চলেছিল?” এখন যদি কেউ মোদিকে জিজ্ঞেস করে, “আদানির বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ?”—উত্তর আসতে পারে, “নিরাপদ তো ছিলো, যতক্ষণ না ইরান রিমোট কন্ট্রোল টিপল।”
বিশ্লেষকেরা অবশ্য সিরিয়াস। তারা বলছেন, এই ঘটনা ভারতের ‘এক্সপানশন স্ট্র্যাটেজি’র জন্য বড় ধাক্কা। আদানি তো শুধু এক ব্যবসায়ী নন, তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রবণতা’। এখন সেই প্রবণতাই যদি বারুদের গন্ধে ঝলসে যায়, তাহলে তো অর্থনীতির চুল পাকবেই।
এই হামলা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে একটি নতুন দৃশ্য সংযোজন করেছে—যেখানে দেখানো হচ্ছে, কূটনৈতিক বন্ধুত্ব আর কর্পোরেট বিনিয়োগ একসাথে করলে মাঝে মাঝে ক্ষেপণাস্ত্র এসে গালে চুমু দেয়।
শেষ কথায় বলা যায়—হাইফা বন্দরের হামলা শুধু ইসরায়েলের নয়, মোদির আদানিপ্রীতিরও বড় ধাক্কা। যুদ্ধের গোলায় যখন বন্ধুর বাড়ি ভাঙে, তখন তার খরচ কিন্তু বন্ধুদেরও দিতে হয়। এখন দেখা যাক, আদানি এই বিলে কতটুকু কাটছাঁট করতে পারেন, আর মোদি বাবু ‘অবকাঠামো কূটনীতি’র এই নতুন পাঠ কতটা হজম করতে পারেন!