শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয়

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
  • ২৪ বার

প্রকাশ: ১৪ই জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সময়কালে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইরান, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে—এই যুদ্ধ কেবল দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং এক বিস্তৃত ভূ-রাজনৈতিক শক্তির টানাপোড়েন এবং কৌশলগত দৃষ্টান্তের প্রতিফলন।

ঘটনার সূত্রপাত, ইরান কর্তৃক পরিচালিত একাধিক হামলার মাধ্যমে। খবরে জানা যায়, ইরান সরাসরি ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে, ইরানের দাবি অনুযায়ী তারা একটি মার্কিন F-35 স্টিলথ যুদ্ধবিমান ভূপতিত করেছে—যেটি এখন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের প্রথম ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাছাড়াও ইরান ইসরাইলের একটি পরমাণু স্থাপনাতেও আঘাত হেনেছে বলে গুজব ছড়িয়েছে, যদিও এ সংক্রান্ত বিস্তারিত এখনো নিশ্চিত নয়। এই হামলায় ইসরাইলে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছেন।

তবে বিশ্লেষকরা এই পাল্টা হামলাকে একটি প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন। ইসরাইল যে ধরনের অপারেশন প্রথম দফায় চালিয়েছে, তা শুধু কার্যকারিতার দিক থেকে নয়, বরং সামরিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইসরাইল অত্যন্ত নিখুঁত ও গোপন অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণ পরিচালনা করেছে, যেখানে তাদের এজেন্টরা ইরানের অভ্যন্তরে থেকে হাই-ভ্যালু টার্গেটের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। এই অভিযানে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ব্যাপক হয়েছে যে, পাল্টা হামলা চালাতে ইরানের ৮-১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এর পেছনে কারণ ছিল, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় করা এবং নতুন করে কমান্ড চেইন স্থাপন।

এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—ইরান কি দীর্ঘমেয়াদে এই সংঘর্ষ বজায় রাখতে পারবে? না কি গতকালের হামলা বা ভবিষ্যতে এক-দুইটি প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়ে অভ্যন্তরীণ জনমতকে শান্ত করে যুদ্ধ থেকে সরে আসবে? এরই মধ্যে ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছে, যা স্পষ্ট করে যে তারা কূটনৈতিক পথে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল বিবেচনা করছে।

ইরানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তারা যদি একতরফাভাবে সংঘর্ষ থেকে সরে আসে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান, বিশেষ করে মিত্র রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে। এটি তার আঞ্চলিক কৌশলগত শক্তি ও ‘শ্যাডো ফোর্স’ তৈরির সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেবে। আবার, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ একাধিক পশ্চিমা শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় পরিচালিত ইসরাইলি আক্রমণের মুখে ইরান কতদিন একা যুদ্ধ চালাতে পারবে, সেটিও বড় প্রশ্ন।

এই যুদ্ধে সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলোর একটি হচ্ছে—আধুনিক যুদ্ধে এককভাবে জেতা প্রায় অসম্ভব। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিও কোথাও একা যুদ্ধ করতে আগ্রহী নয়। বরং তারা সর্বদা নির্ভরযোগ্য মিত্রদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অভিযান চালায়। এদিক থেকে ইরানের কৌশলগত ভুল হলো, হুমকি জেনেও সে রাশিয়া ও চীনের পক্ষ থেকে যে সমর্থন বা সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয়েছিল, তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। আজ যদি চীন বা রাশিয়া সরাসরি ইরানের পাশে দাঁড়াত, হয়তো ইসরাইল এতটা নির্ভয়ে আগ্রাসী হতে পারত না।

বাংলাদেশের জন্য এই যুদ্ধ পরিস্থিতি একটি কঠিন বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের বিপদের পূর্বাভাস বয়ে আনছে। ইরান সামরিকভাবে বাংলাদেশ থেকে বহু গুণ শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র, কিন্তু তার প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত ভুলের কারণে তাকে তীব্র বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আরও গভীর ও বহুমাত্রিক। দেশে জনমানসিকতার বৈচিত্র্য, দেশপ্রেমের অভাব, সীমাহীন দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে, এখানে যেকোনো অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণ সহজেই বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

যদিও বাংলাদেশে একটি দক্ষ সামরিক বাহিনী রয়েছে, তবে সামরিক সরঞ্জাম ও প্রস্তুতির ঘাটতি প্রকট। বিমানবাহিনীর ‘বাংলার আকাশ রাখিবো মুক্ত’ স্লোগানটি আজ নিছক একটি অলঙ্কারিক বাক্যে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনে একটি যুদ্ধবিমানও ক্রয় করা হয়নি, বরং আগের সময়ের মিগ-২৯ বিমানগুলোর যুদ্ধক্ষমতা নিয়েই সংশয় রয়েছে। কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষা বলতে আজ শুধু কিছু টিবিটি-২ ড্রোন ও অপ্রতুল অস্ত্র মজুত।

বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যখন চারদিকেই যুদ্ধের গন্ধ, তখন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে ভাবার এখনই সময়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি চাহিদা হলো বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত সামরিক মিত্রতা। এই মিত্রতা এমন হতে হবে, যারা শুধু অস্ত্র সরবরাহ করেই থেমে থাকবে না, বরং বিপদের সময় বাংলাদেশের জন্য সরাসরি অংশ নেবে। একই সঙ্গে একক মিত্রতার ওপর নির্ভরশীলতা বিপজ্জনক। তাই চীন, পাকিস্তান ও তুরস্ক—এই তিনটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা বাংলাদেশের জন্য এখন সময়ের দাবি।

সামরিক সক্ষমতা কোনো একটি সময়ে হুট করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আজকের বিশ্বে যেকোনো যুদ্ধ শুধু সীমান্ত বা আকাশসীমা নয়, বরং তথ্য, অন্তর্ঘাত, এবং কৌশলগত সম্পর্কের মধ্য দিয়েও পরিচালিত হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ইরান-ইসরাইলের এই সংঘর্ষ কেবল দুটি দেশের মধ্যে নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতির এক অজানা অধ্যায়ের প্রতিফলন—যেখানে শক্তি, কূটনীতি ও প্রযুক্তি এক নতুন মাত্রায় সংঘাতের নিয়ম লিখছে।

বাংলাদেশকে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে শিখে, আত্মসমীক্ষা করে, যথাযথ প্রস্তুতি নিতে না পারলে ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে নিজেকেই এমন কোনো দুর্দশার মুখোমুখি হতে হতে পারে—যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫