শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলের পথে ট্রেনে ফিরছেন শ্রমজীবীরা

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
  • ২১ বার
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলের পথে ট্রেনে ফিরছেন শ্রমজীবীরা

প্রকাশ: ১২ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
ঈদুল আজহার ছুটির পর কর্মস্থলে ফিরতে রাজধানী ঢাকামুখী মানুষের স্রোত— ট্রেনের ছাদে চেপে ফিরছেন হাজারো যাত্রী

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের রেলস্টেশনগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেখা গেছে ঢাকা অভিমুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে গৌরীপুর, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জসহ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে জনস্রোতের এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে, যা অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে একপ্রকার ভেঙে পড়ার উপক্রম করেছে।

সরেজমিনে গৌরীপুর জংশন স্টেশনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মজুড়ে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী ট্রেনের অপেক্ষায়। ট্রেন আসামাত্র যাত্রীরা বগির ভেতরে প্রবেশের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। তবে বেশিরভাগ যাত্রীই ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছেন। এমনকি নারী ও শিশুরাও মই ব্যবহার করে ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছেন, যা চরমভাবে উদ্বেগজনক। ছাদে ওঠা নিয়ে রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা বারবার মাইকিং করে নিষেধ করলেও যাত্রীরা কোনো সতর্কতা মানছেন না। বরং সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য তারা মরিয়া হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভ্রমণকে বেছে নিচ্ছেন।

রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা নিয়মিতভাবে যাত্রীদের ছাদে উঠা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছেন এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবুও অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এমন বিপজ্জনক অবস্থা ঠেকানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পুলিশ সদস্যরা সীমিত জনবল এবং সামর্থ্য নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত চাপের কাছে অনেকক্ষেত্রে তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত কিছু ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকাগামী কমিউটার, সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, সকাল সাড়ে ১০টায় মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী হাওড় এক্সপ্রেস এবং দুপুর দেড়টায় বলাকা কমিউটার ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এসব ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে অনেক বগিতে দাঁড়ানোর জায়গাও ছিল না। অনেকে জানালার ফাঁক বা দরজার পাশ দিয়ে উঠে যান ছাদে। একেকটি ট্রেন যেন হয়ে উঠেছে চলন্ত জনপদ, যেখানে মানুষ একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছাদে বসে ভ্রমণ করছেন।

স্টেশনগুলোর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেকটা দেরিতে আসছে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে তারা বাধ্য হচ্ছেন যেকোনোভাবে রওনা হতে। কেউ ছাদে উঠে যাচ্ছেন, কেউ বা দরজার ফাঁকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রা করছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির কারণে যাতে চাকরি নিয়ে ঝুঁকিতে পড়তে না হয়, সেই আশঙ্কা থেকেই অনেকেই এসব ঝুঁকি নিচ্ছেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এমন পরিস্থিতিতে চরম চাপের মুখে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে বটে, তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ব্যবস্থাপনা কার্যত ভেঙে পড়ছে। যাত্রীদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে এবং এটি প্রতিরোধ করা প্রশাসনের জন্য ক্রমেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।

এদিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঈদ পরবর্তী সময়ে ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা হুমকি। প্রশাসনের নির্দেশনা ও সতর্কতা উপেক্ষা করে যাত্রীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছেন, যার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রেলওয়ের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। ভিড় সামাল দিতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন, ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সময়ানুবর্তিতা এবং যাত্রী নিয়ন্ত্রণে আধুনিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া ভবিষ্যতেও এ ধরনের চিত্র দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

ঈদ শেষে কর্মজীবী মানুষদের বাড়ি থেকে শহরে ফেরা বরাবরই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তবে এবারের চিত্রটি অতীতের সব সীমা অতিক্রম করেছে। যে যেভাবে পারছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন কর্মস্থলে, যা কেবল মানবিক সংকট নয়, বরং জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতার একটি বড় প্রমাণও বটে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫