প্রকাশ: ০৫ই জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ধর্মীয় পরিচয় ও অতীত জীবনের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে করা ওই মন্তব্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক এবং অনেকের দৃষ্টিতে এটি শিষ্টাচার ও রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের পরিপন্থী।
গত কয়েক সপ্তাহে রাজনৈতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন সমর্থন, তেমনি সমালোচনাও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বরকত উল্লাহ বুলু তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অগ্রহণযোগ্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বক্তব্যে বুলু দাবি করেন, ড. ইউনূস নাকি ১৯৭০ সালে বিদেশে অবস্থানকালে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং পরে একটি খ্রিস্টান পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ড. ইউনূস বর্তমানে মুসলিম কিনা এবং যদি হয়ে থাকেন, তবে কবে পুনরায় ইসলাম ধর্মে ফিরে এসেছেন।
এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস কিংবা ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে জনসমক্ষে প্রশ্ন তোলা শুধু অশোভনই নয়, এটি ব্যক্তি স্বাধীনতাকেও চ্যালেঞ্জ করে। বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং এটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে যায়।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রাজনীতির মাঠে নীতিগত বিরোধ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
বিএনপির অভ্যন্তরেও অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বরকত উল্লাহ বুলুর বক্তব্য বিএনপির মূল রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে।
অপরদিকে, ড. ইউনূসপন্থী মহল থেকেও এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, তারা বিষয়টিকে ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির এই সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের আরও সংযত, দায়িত্বশীল ও শালীন ভাষা ব্যবহার করা উচিত, যাতে রাজনৈতিক বিতর্ক সুস্থ এবং গঠনমূলক ধারা বজায় রাখতে পারে।
এই ঘটনার পর দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—শালীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা কি রাজনৈতিক পরিসরে উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে?