প্রকাশ: ০৪ জুন’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
দীর্ঘ সংস্কার শেষে বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে বাংলাদেশের জাতীয় স্টেডিয়াম। জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফিফা স্বীকৃত একটি প্রীতি ম্যাচ, যেখানে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভুটান। সন্ধ্যা ৭টায় ম্যাচটি শুরু হবে এবং এটি ঘিরে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনা এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে দূরে থাকা ‘হোম অব ফুটবল’ নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করছে এই ম্যাচ দিয়েই।
এই ম্যাচ ঘিরে সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ এতটাই তুঙ্গে যে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বাফুফে ভবনে উপস্থিত হন সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলনের স্থানটিতে স্থান সংকুলান করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং বাফুফে মিডিয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বারবার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। সংবাদমাধ্যমের এমন আগ্রহ ফুটবল অঙ্গনে অনেকদিন দেখা যায়নি। মূলত এই উন্মাদনার কেন্দ্রে রয়েছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী, যিনি এই ম্যাচেই প্রথমবার দেশের মাটিতে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা জানিয়েছেন, তিনি এবং তার দল এই ম্যাচ ঘিরে ভীষণভাবে উজ্জীবিত। স্প্যানিশ এই কোচ আশাবাদী, ভুটানের বিপক্ষে একটি রোমাঞ্চকর ও আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দিতে পারবে তার দল। হামজার খেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটি দূর করে কাবরেরা নিশ্চিত করেছেন, তিনি আজই দেশের জার্সিতে অভিষেক করবেন। অন্যদিকে, তরুণ মিডফিল্ডার ফাহামিদুলকে পুরো ম্যাচে পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে, কারণ তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে অনুশীলনের পর। কাবরেরা আরও জানিয়েছেন, এই ম্যাচটি শুধু একটি প্রীতি ম্যাচ নয়, বরং ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
দীর্ঘ এক দশক ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলে চলা ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াও ভুটান ম্যাচকে ঘিরে বাড়তি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় দেখে বিস্মিত হন তিনি। এমন ফুটবল-উত্তেজনা তিনি এর আগে খুব কমই দেখেছেন বলে জানান। জামাল বলেন, বাংলাদেশ দল এই ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছে। প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। জামাল উদাহরণ টেনে বলেন, ফ্রান্স তাদের বিশ্বকাপজয়ী দল তৈরি করেছিল প্রবাসী ফুটবলারদের ঘিরেই, বাংলাদেশও তেমনি এগিয়ে যেতে পারে। তবে তিনি ভুটান ম্যাচে খেলবেন কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। কারণ গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও কোচ কাবরেরা তাকে খেলাননি। জামাল এই বিষয়ে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমার হাতে নেই।”
ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ১২টিতেই জয় পেয়েছে। দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে এবং দুটি ম্যাচে হেরেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভুটানে সফরে গিয়ে একটি ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে এবারের পরিস্থিতি আলাদা। দলটিতে হামজা চৌধুরীর মতো হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়ের আগমন এবং আরও কিছু প্রবাসী ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তি দলকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে। ফলে ঘরের মাঠে বড় জয় প্রত্যাশা করছে ফুটবলপ্রেমীরা। এই জয় শুধু মাঠের লড়াই নয়, সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে মানসিক আত্মবিশ্বাসের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে ভুটান দলও একেবারে হালকা প্রতিপক্ষ নয়। ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৩ নম্বরে, আর ভুটান রয়েছে তার ঠিক একধাপ ওপরে, ১৮২তম স্থানে। ভুটান দলে খেলছেন দুইজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফুটবলার, যারা দলের মান বাড়িয়েছেন। এই ম্যাচ শেষে তাদের সামনে রয়েছে ব্রুনাইয়ের বিপক্ষে আরেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স করে আত্মবিশ্বাস অর্জন করাই ভুটানের লক্ষ্য। তাদের জাপানি কোচ কিজুকি নাকামুরা বলেছেন, “বাংলাদেশ শক্তিশালী দল হলেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ খেলাটাই উপহার দিতে চাই। এখান থেকে ভালো স্মৃতি নিয়ে ফিরে যেতে চাই আমরা।”
এই ম্যাচ ঘিরে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ফুটবলের এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরছে ঘরের মাঠে, নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবলে। মাঠে যেমন লড়াই হবে, তেমনি গ্যালারিতেও থাকবে উন্মাদনা, আর কোটি ভক্তের মনে থাকবে আশাবাদ—এই ম্যাচ দিয়েই শুরু হোক বাংলাদেশের ফুটবলের এক নতুন অধ্যায়।