প্রকাশ: ৩রা জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিশ্লেষণ ও মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মন্তব্য করেছেন, “এই বাজেট জুলাই অভ্যুত্থানের যে বৈষম্যবিরোধী স্পিরিট তৈরি করেছিল, তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।” মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে অনুষ্ঠিত এক বাজেট বিশ্লেষণ কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বাজেটের ইতিবাচক দিকগুলো স্বীকার করলেও ড. ফাহমিদা মনে করেন, সামগ্রিকভাবে এটি একটি সম্ভাবনাময় মুহূর্তে একটি অনুপযুক্ত প্রতিক্রিয়া। তাঁর ভাষায়, “বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে, যেমন প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ। তবে যে বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের প্রত্যাশা ছিল, সেটি এই বাজেটে অনুপস্থিত।”
বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন ২০২৬–২৭ অর্থবছর থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অথচ চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ এখনই বিপর্যস্ত। যদি এই নতুন করমুক্ত সীমা ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকেই কার্যকর করা হতো, তাহলে এটি বাজারে সরাসরি একটি স্বস্তিদায়ক প্রভাব ফেলত। মানুষ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সুযোগ পেত।”
মূল্যস্ফীতির বর্তমান প্রবণতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় কর-সুবিধা পেছানো একধরনের অমানবিক সিদ্ধান্ত। এটি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।
ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বাজেটে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই হার একই জায়গায় আটকে আছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এক ধরণের বাধা। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে কাঠামোগত সংস্কার এবং উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি সরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রশংসা করলেও প্রশ্ন রাখেন, এই বিনিয়োগ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণযোগ্য কি না।
বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বাজেটের কাঠামো ও ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, বাজেট একটি কৌশলগত দলিল হলেও এটি কোনো রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলনও বটে। সরকার যদি বৈষম্য কমানো, দারিদ্র্য হ্রাস, এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিতে চায়, তবে বাজেটে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন থাকা আবশ্যক।
সিপিডির বাজেট বিশ্লেষণ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে এ ধরনের স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া উচিত, যাতে পরিকল্পনা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবিক পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক হয়।
জাতীয় বাজেট যদি শুধুমাত্র সংখ্যা আর বরাদ্দের খাতা না হয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রূপরেখা হয়ে দাঁড়ায়, তবেই একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে সিপিডির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা হয়ে উঠতে পারে বাস্তবতার আয়না।