প্রকাশ: ৩রা জুন ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । আজকের খবর অনলাইন
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, “প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের আপোস নেই।” রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত শেরাটন হোটেলে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন।
জামায়াত আমির বলেন, “এক কোটি দশ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। অথচ তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা একপ্রকার নির্মম উপহাস ছাড়া কিছু নয়। যারা বিদেশে কষ্ট করে উপার্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এক কোটি দশ লাখ মানুষকে উপেক্ষা করে কোন সরকারের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব বা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সম্ভব নয়। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত হবে।” এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করি কমিশন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।”
ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে এবং কমিশনের উচিত তা দ্রুত কার্যকর করা। তার ভাষায়, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, তারা যেন তাদের চেয়ারের মর্যাদা রক্ষা করে। জামায়াত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তবে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে জামায়াত তা নীরবে মেনে নেবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন কোনো প্রক্রিয়ার অংশ হতে চাই না যেখানে সংবিধান, আইন এবং আদালতের রায় অবজ্ঞার শিকার হবে। আমরা মনে করি, গণতন্ত্রের পথে চলতে হলে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা আবশ্যক। আমাদের রায় অনুযায়ী নিবন্ধন ফিরে পাওয়া উচিত, এবং নির্বাচন কমিশনের উচিত তা ফিরিয়ে দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা।”
প্রেস কনফারেন্সে জামায়াত আমির আরও দাবি করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা হোক। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি স্বচ্ছতার সূচক হতে পারে। এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা প্রমাণিত হবে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী একদিকে প্রবাসী ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, অন্যদিকে নিজ দলের রাজনৈতিক স্বীকৃতি ফিরে পেতে সচেষ্ট থাকার কথাও স্পষ্ট করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলে মনে করা হচ্ছে, দলের এই সক্রিয় অবস্থান রাজনৈতিক ময়দানে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পুরো আয়োজনেই স্পষ্ট ছিল যে, জামায়াত আগাম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটাধিকার একটি কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে একথা স্পষ্ট, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার, নিবন্ধন ও রাজনৈতিক স্বীকৃতির প্রশ্নে জামায়াত আর পিছিয়ে থাকবে না—তাদের বক্তব্যে তারই ইঙ্গিত মিলেছে।