প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫ | আজকের খবর অনলাইন | নিজস্ব সংবাদদাতা
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও গভীর করতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (JEC) ১৫তম সভা। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশের পক্ষ থেকে অর্থনীতি, শিল্প এবং বাণিজ্যিক সরবরাহ ব্যবস্থায় সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং চীনের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সরকারি তথ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই সমঝোতা স্মারক দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কৌশলগত উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এর আগে গত মার্চ মাসে চীন সফরে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের সময় বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকেই মূলত শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায় এবং বর্তমান সমঝোতা স্মারক তারই একটি বাস্তবায়ন ধাপ।
বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেয়া প্রতিনিধি দলগুলো উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে, শিল্পোৎপাদন ও কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থায় পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি এবং চীনের সহায়তার শর্তাবলি আরও সহজ ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্পের সম্ভাবনা এবং তা পুনরুজ্জীবনের পথনকশা। চীনের পক্ষ থেকে এ শিল্পে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া দেশের বিদ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে চীনের ভূমিকা আরও জোরালো করতে আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
সভায় দু’দেশের প্রতিনিধিরা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি টেকসই, সুষম এবং ন্যায্য বাণিজ্য নীতিমালার ওপর জোর দেন। তাঁরা মনে করেন, বাণিজ্যিক ভারসাম্য এবং অবকাঠামোগত সহযোগিতা এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং এর মাধ্যমেই উভয় দেশ পারস্পরিক লাভবান হতে পারে।
চূড়ান্তভাবে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক কেবল বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়, বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বেও নতুন মাত্রা পাবে।
এছাড়া, যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পরবর্তী ১৬তম সভা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্কের এ ধারা শুধু দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।