প্রকাশ: ৩০শে জুন ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকের খবর অনলাইন
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব প্রতিযোগিতা “ক্লাব বিশ্বকাপ” এ উত্তেজনার ঝড় তুলে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোকে ৪-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে জার্মান ফুটবলের মহারথী বায়ার্ন মিউনিখ। রোববার (২৯ জুন) বাংলাদেশ সময় রাতে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ড রক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি ছিল এক কথায় রুদ্ধশ্বাস এবং রোমাঞ্চকর।
বায়ার্ন মিউনিখের খেলা শুরুর মুহূর্ত থেকেই ছিল শাসনমূলক এবং নিখুঁত আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রদর্শনী। ম্যাচের মাত্র ষষ্ঠ মিনিটেই প্রতিপক্ষ ফ্ল্যামেঙ্গোর এক দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল তাদের ১-০ গোলে এগিয়ে দেয়। তবে এখানেই থেমে থাকেনি জার্মান ক্লাবটি। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ও দলের অন্যতম ভরসা হ্যারি কেইন নবম মিনিটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দেন। এই মুহূর্তেই বোঝা যাচ্ছিল, বায়ার্ন আজ ভিন্ন কিছু করে দেখাতে নামছে মাঠে।
কিন্তু একপ্রকার লড়াকু মানসিকতা নিয়ে খেলায় ফিরে আসার চেষ্টা করে ফ্ল্যামেঙ্গো। ৩৩তম মিনিটে তারা একটি গোল শোধ করে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে। তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি হয়তো আরও নাটকীয় কিছু উপহার দিতে চলেছে। কিন্তু বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে (৪১তম মিনিটে) লিওন গোরেটজকা দলের হয়ে তৃতীয় গোল করে ফ্ল্যামেঙ্গোর আশায় জল ঢেলে দেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় বায়ার্নের ৩-১ গোলের পরিষ্কার নেতৃত্বে।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে এক নতুন ফ্ল্যামেঙ্গো। আক্রমণের তীব্রতা এবং মিডফিল্ডে আধিপত্য বিস্তার করে তারা একাধিক সুযোগ তৈরি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫৫তম মিনিটে ইতালিয়ান মিডফিল্ডার এবং সাবেক চেলসি তারকা জর্গিনহো একটি দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ৩-২-এ। ম্যাচ তখন পূর্ণ উত্তেজনার পথে।
তবে অভিজ্ঞতা ও ক্লাসের দিক থেকে এগিয়ে থাকা বায়ার্নকে দমিয়ে রাখা এত সহজ ছিল না। ৭৩তম মিনিটে হ্যারি কেইন নিজের দ্বিতীয় এবং দলের চতুর্থ গোল করে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির প্রত্যাবর্তনের সকল সম্ভাবনায় একরকম ইতি টেনে দেন। এরপর ফ্ল্যামেঙ্গো বেশ কয়েকবার আক্রমণে ওঠে, কিন্তু তাদের শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং দুর্বলতা এবং বায়ার্নের জমাট রক্ষণ তাদের আর গোলের দেখা পেতে দেয়নি।
ম্যাচে ফ্ল্যামেঙ্গো বল দখলে ও আক্রমণের সংখ্যায় কিছুটা এগিয়ে থাকলেও গোল ব্যবধানের দিক থেকে তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। এটি আবারও প্রমাণ করল যে, আধিপত্য শুধু বল পজেশনে নয়—বরং কার্যকর ফিনিশিংই একটি দলের জয় নির্ধারণ করে দেয়। বায়ার্ন তাদের গোছানো ফুটবল, পরিকল্পিত পাসিং ও ট্যাকটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রমাণ করেছে কেন তারা ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি।
এই জয়ের মাধ্যমে বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে। পরবর্তী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেন্ট-জার্মেই (পিএসজি), যে ম্যাচটি ইতোমধ্যেই ফুটবল অনুরাগীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে একেকটি ক্লাব বিশ্বকাপ মানেই একেকটি নাটকীয়তা ও চমক। ফ্ল্যামেঙ্গোর মতো দক্ষিণ আমেরিকার অভিজাত দল যখন ইউরোপের আধিপত্যশীল ক্লাবের মুখোমুখি হয়, তখন তা শুধু একটি খেলা নয়, বরং সংস্কৃতি, কৌশল ও প্রতিভার সম্মিলন হয়ে ওঠে। বায়ার্ন বনাম ফ্ল্যামেঙ্গো সেই দৃষ্টান্তই রেখে গেল।
এখন চোখ বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের: বায়ার্ন ও পিএসজির হাইভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালে। সেই লড়াই কে জিতবে—তা জানতে অপেক্ষা আর কয়েক দিনের। তবে তার আগে, বায়ার্নের এই বিজয় নিঃসন্দেহে দলটির আত্মবিশ্বাস ও সমর্থকদের প্রত্যাশাকে আরও কয়েক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেল।