শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

মেসি-পিএসজি : একটি ভুল প্রেমের গল্প, শেষটা আশীর্বাদের মতোই

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ৪০ বার
মেসি-পিএসজি : একটি ভুল প্রেমের গল্প, শেষটা আশীর্বাদের মতোই

প্রকাশ: ২৮শে জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

লিওনেল মেসি—ফুটবলের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ৩৮ বছর বয়সে এসেও যিনি আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন, যিনি একটি বিশ্বকাপ জিতে জাতির কান্না থামাতে পারেন, সেই মেসির জীবনেও এমন একটি অধ্যায় আছে, যা তিনি নিজেও মনে রাখেন না ভালোবাসা নিয়ে—তা হলো তার পিএসজি যাত্রা। প্যারিস সেই শহর, যেখানে তিনি এসেছিলেন খ্যাতি ও সম্মান নিয়ে, কিন্তু ফিরেছেন হতাশা আর ক্লান্তি বুকে চেপে।

২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে মেসির পিএসজিতে পাড়ি জমানোটা ছিল এক অনিচ্ছায় গড়ে ওঠা সম্পর্কের সূচনা। তিনি বার্সা ছাড়তে চাননি—সেই ক্লাব ছিল তার শৈশব, তার পরিবার, তার জীবনযাপন। কিন্তু ক্লাবের অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে বাধ্য হয়েই কাঁদতে কাঁদতে পাড়ি জমাতে হয় প্যারিসে। বিদায়ের সময় মেসির চোখের জল ছিল যেমন বেদনার প্রতীক, তেমনি অনিশ্চয়তা ছিল ভবিষ্যৎ নিয়ে।

প্যারিস সেই অনভ্যস্ত, বিশৃঙ্খল শহরটি মেসির মতো এক পারফেকশনিস্টের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না। নতুন পরিবেশ, পরিবার নিয়ে মানিয়ে নেওয়ার যুদ্ধ, প্রাক-মৌসুমে অনুপস্থিতি, কভিডের প্রভাব এবং নাগরিক জীবনের জটিলতা—সব মিলে শুরু থেকেই তালগোল পাকিয়ে যায় তার নতুন অধ্যায়টি। তার নিজের কথায়, “পিএসজিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই অখুশি ছিলাম, উপভোগ করতে পারিনি।”

দুই মৌসুমে মেসির পারফরম্যান্স প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। গোলসংখ্যা কম, বার্সার সেই জাদুকরী উপস্থিতি নেই। ফলে সমর্থকদের মনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্ম নেয়। এমনকি এক সময় নিজ ক্লাবের মাঠেই দুয়ো শুনতে হয় তাকে—একটা দৃশ্য যা ফুটবলবিশ্বে আগে কখনও দেখা যায়নি। অথচ এর মাঝেই বিশ্বমঞ্চে, কাতার বিশ্বকাপে সেই একই মেসিই আর্জেন্টিনাকে এনে দেন সোনালি ট্রফি, বারবার প্রমাণ করে দেন—তিনি ঠিক আগের সেই মেসিই।

পিএসজি দলে সেই সময় চলছিল অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন। তিন তারকা খেলোয়াড়—মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে—একসঙ্গে খেললেও তাদের মধ্যে রক্ষণে দায়িত্ব পালনের অভাব দলটিকে করে তোলে ভারসাম্যহীন। কৌশলগত দিক থেকেও এটি ছিল পিএসজির বড় দুর্বলতা। এর পাশাপাশি অনেকে মেসিকে দেখেছিলেন শুধু একটি বাণিজ্যিক চুক্তির অংশ হিসেবে—যার উদ্দেশ্য ছিল জার্সি বিক্রি আর মার্কেটিং, ফুটবলে সাফল্য নয়।

চুক্তি শেষে মেসি আর পিএসজি কেউই একে অপরকে রাখতে চায়নি। সম্পর্কের অবসান ঘটেছিল চুপচাপ। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিচ্ছেদ হয় আশীর্বাদস্বরূপ। মেসি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে—একটি তুলনামূলকভাবে শান্ত, নির্ভার পরিবেশে। সেখানে তিনি ফুটবলের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছেন এবং নিজের শর্তে জীবন উপভোগ করছেন।

অন্যদিকে, পিএসজি মেসিকে ছেড়ে দিয়ে দলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনে। ব্যালান্সড স্কোয়াড গঠনে মনোযোগ দেয়, তরুণদের উপর আস্থা রাখে। অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরে পেয়ে অবশেষে চ্যাম্পিয়নস লিগের খরা কাটায়—যেটা তারা দীর্ঘদিন ধরে চাইছিল।

এই দুই ভিন্ন পথে হাঁটায় দু’পক্ষই হয়তো আজ পরিপূর্ণ। তাদের সম্পর্কের সমাপ্তি ছিল পরিণতিপূর্ণ, এবং ভবিষ্যতের জন্য গঠনমূলক।

এখন সেই সম্পর্কের আবার একটি ভিন্ন মাত্রা পেতে যাচ্ছে নতুন রূপ। ক্লাব বিশ্বকাপের আসরে এবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে মেসির ইন্টার মায়ামি এবং তার পুরনো ক্লাব পিএসজি। অনেকেই একে ক্ষোভ, প্রতিশোধের ম্যাচ বলে আখ্যা দিলেও বাস্তবতা হলো—এটি এক সৌজন্যপূর্ণ পুনর্মিলনের মুহূর্ত, যেখানে দু’পক্ষ বুঝে নিয়েছে, তারা একে অপরের জন্য ছিল না।

মেসির ৩৮তম জন্মদিনে পিএসজির অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে তাকে জানানো হয় শুভেচ্ছা, আর লেখা হয়—“রবিবার দেখা হবে।” ফুটবলের এই গল্প তাই আর বিরোধের নয়, বরং পরিণতির—একটি ভুল প্রেমের যাত্রা, যার শেষটা ছিল পরিণত, পরিপক্ব আর আশীর্বাদের মতো।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫