প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
শরীয়তপুরের সখিপুর উপজেলায় এক অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় এলাকাজুড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের আলী আশ্রাফ বেপারি কান্দি এলাকার একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা মরদেহটির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে এবং জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা গফুর ঢালীর বাড়ির পাশে একটি ডোবায় তরুণীর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং তা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর এলাকার শিশুরা খেলতে গিয়ে ডোবায় কিছু অস্বাভাবিক কিছু ভাসতে দেখে চিৎকার করে। তাদের ডাকে ছুটে যান স্থানীয়রা এবং দৃশ্যমান মরদেহ দেখে সঙ্গে সঙ্গেই থানায় খবর পাঠানো হয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে একটি কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায়। মৃত তরুণীর বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ বছর বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মরদেহ আংশিক পচে যাওয়ায় তার পরিচয় শনাক্ত করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, কিংবা এটি হত্যাকাণ্ড কি না—তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ওসি ওবায়দুল হক বলেন, “মরদেহটি কয়েকদিন আগের বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তরুণীর পরিচয় শনাক্তে স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে এবং আশপাশের থানাগুলোতেও বার্তা পাঠানো হয়েছে।”
ঘটনাস্থল ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, এমন একটি ঘটনা এলাকাকে নিরাপত্তার প্রশ্নে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এই বয়সী কোনো মেয়ে নিখোঁজ ছিল কিনা—তা জানার চেষ্টা চালানো হলেও এখন পর্যন্ত কেউ থানায় এসে কোনো অভিযোগ করেনি।
অপরদিকে স্থানীয়দের কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে, তরুণীটি হয়তো বাইরে থেকে এনে এখানে ফেলে যাওয়া হতে পারে। ডোবার অবস্থান জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় দিন কিংবা রাতে এই জায়গায় কাউকে মরদেহ ফেলে যেতে হলে তা কারও না-কারও চোখে পড়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কিছু দেখেনি বা জানায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুর জেলায় এ ধরনের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি, তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও মাঝে মাঝে এ ধরনের রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে তরুণীটি নিখোঁজ ছিল কি না, স্থানীয়ভাবে তার সঙ্গে কারও আত্মীয়তার যোগসূত্র আছে কি না—এসব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার কথা ভাবছে পুলিশ, যদিও এলাকাটি মূলত গ্রামীণ হওয়ায় সেখানে সিসিটিভি কাভারেজ সীমিত।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত শনাক্তকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা চান, রহস্য যত গভীরই হোক না কেন, নিহত তরুণীর পরিচয় উদ্ঘাটন হোক এবং যদি এটি কোনো অপরাধের ফল হয়, তাহলে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
বর্তমানে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত জারি রয়েছে, আর মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরিষ্কার হবে এটি নিছক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যতক্ষণ না মৃত তরুণীর পরিচয় উদ্ঘাটিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এলাকাবাসীর মনে দানা বাঁধা প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলছে না।