শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের রেশ: ইরানে শঙ্কার ছায়া, মৃত্যুদণ্ড ও দমন অভিযানের নতুন ঢেউ

আজকের খবর অনলাইন
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ১৩ বার
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের রেশ: ইরানে শঙ্কার ছায়া, মৃত্যুদণ্ড ও দমন অভিযানের নতুন ঢেউ

প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ইরান বর্তমানে এক নতুন ধরণের রাষ্ট্রীয় অভিযানে লিপ্ত—যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সাময়িক সংঘাতের পর দেশটির অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে এক ধরনের ভয়াবহ দমন অভিযান, যার আওতায় ইতোমধ্যেই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এবং ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী এই পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি মূলত বিরোধী মত দমন ও সমাজে ভয় সৃষ্টির একটি রাষ্ট্রীয় কৌশল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ‘গোয়েন্দা অনুপ্রবেশ’-এর অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ডের ঢেউ শুরু হয়েছে। ইরান সরকারের ভাষ্যে বলা হচ্ছে, দেশের ভেতরে চলমান গোয়েন্দা তৎপরতা এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার পেছনে ইসরায়েলি মদদ রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ‘জাতীয় স্বার্থ’ রক্ষার অজুহাতে অনেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়ছেন নিপীড়নের মুখে।

তেহরান থেকে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দাবি করা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই ‘স্বীকারোক্তি’ দিয়েছেন যে তারা ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এসব স্বীকারোক্তির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, কারণ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ইরানে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ন্যায্য বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠছে।

এই দমন অভিযান শুধু রাষ্ট্রের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই। ইরান সরকার বিদেশে অবস্থিত ফার্সিভাষী সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপরও ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে। বিবিসি ফার্সি, ইরান ইন্টারন্যাশনাল এবং মানোটা টিভির মতো জনপ্রিয় চ্যানেলগুলোর সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে সাংবাদিকদের দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক উপস্থাপিকার পরিবারকে আটক করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিবিসি ফার্সির একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের পরিবারকে সরাসরি হুমকি দিয়ে জানিয়েছে—‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করা ন্যায্য।’ এমনকি সাংবাদিকদের ‘মোহারেব’ অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে—যা দেশটির শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও সরাসরি মৃত্যুদণ্ডের উপযোগী বলে বিবেচিত।

এই দমননীতি সাধারণ নাগরিকদের জীবনেও প্রভাব ফেলছে। অনেকেই জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরায়েল সম্পর্কিত পোস্ট কিংবা পেজ দেখার কারণে গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় থেকে হুমকি সংবলিত বার্তা পেয়েছেন। মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য খুঁজে বের করে সরাসরি এসএমএস পাঠানো হচ্ছে, যেখানে জানানো হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট পেজ ত্যাগ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তেহরান সরকার যুদ্ধবিরতির পরও দেশের ডিজিটাল পরিসরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউবসহ প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ নিষিদ্ধ। মানুষ ভিপিএনের মাধ্যমে এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলেও সেখানেও নজরদারির শঙ্কা বিরাজ করছে। দেশজুড়ে এক ধরনের ‘নীরব আতঙ্ক’ তৈরি হয়েছে, যেখানে মোবাইল ফোনে কোনো ভুল ক্লিক কিংবা শেয়ারই হতে পারে গ্রেপ্তারের কারণ।

অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ইরান বর্তমানে যে দমন-পীড়নের কৌশল নিচ্ছে, তা ১৯৮০-এর দশকের সেই অন্ধকার অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়, যখন ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ‘মৃত্যুদণ্ড কমিশন’ গোপনে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে হত্যা করে গণকবরে দাফন করেছিল। আজকের পরিস্থিতিও তেমনই এক দমন সংস্কৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে সরকারের অকার্যকর কূটনৈতিক অবস্থানকে ঢাকতে ভেতরের বিরোধী শক্তি দমনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিচ্ছে যে, এই নির্যাতনমূলক ধরপাকড়, মৃত্যুদণ্ড ও দমন অভিযানের মাধ্যমে হয়তো সাময়িকভাবে ভিন্নমত রোধ করা সম্ভব, কিন্তু তাতে ক্ষোভ আরও ঘনীভূত হবে এবং জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ আরও গভীরভাবে প্রসারিত হবে।

একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা অবশ্যই রাষ্ট্রের দায়িত্ব, কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায্য বিচার ব্যবস্থাকে বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—জাতীয় নিরাপত্তা কাকে রক্ষা করছে, আর কাকে নিঃস্ব করছে?

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫