শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

‘শত্রুকে শাস্তি পেতেই হবে’ — খামেনির হুঁশিয়ারি, আগ্রাসনের জবাব চলছে

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ৬৫ বার

প্রকাশ : ২৪ শে জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

তেহরান থেকে প্রকাশিত এক সংক্ষিপ্ত, কিন্তু স্পষ্ট বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি জানিয়েছেন—ইরান কখনোই কারো ওপর আগ্রাসন চালায়নি, আবার “কোনো পরিস্থিতিতেই” কোনো বহিঃশক্তির আগ্রাসন সহ্য করবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা ওই বার্তায় খামেনি লেখেন, “আমরা কারোর ক্ষতি করিনি। আর আমরা কখনোই কারোর হয়রানি মেনে নেব না, কারোর সামনে মাথা নত করব না; এটা-ই ইরানি জাতির যুক্তি।”

একই বার্তায় তিনি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আরও বলেন, “শাস্তি চলছে। সিয়োনি শত্রু একটি বড় ভুল করেছে, একটি গুরুতর অপরাধ করেছে; তাকে শাস্তি পেতেই হবে—এবং সেটা হচ্ছে, হচ্ছে এখনই।” সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে “অপারেশন মিডনাইট হ্যামার” পরিচালনা করে ইরানের ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার দাবি করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এ মন্তব্য এল।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ-অভিযানের পর ইরান বিপরীতে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের তেল আভিভ-সহ কয়েকটি শহরে আঘাত হানার কথা জানায়, পাশাপাশি কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতেও অন্তত ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে তেহরানঘনিষ্ঠ তাসনিম নিউজ দাবি করে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর অস্বীকার করে “ক্ষয়ক্ষতি নগণ্য” বলে উল্লেখ করেছে।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা পরিষদের অদ্যাবধি সর্ববৃহৎ ঢেউ-আকারের পাল্টা হামলায় এবার তারা তেহরানের এভিন কারাগারসহ “শাসক-যন্ত্রের দমনমূলক প্রতীক” বলে চিহ্নিত স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গ্যালান্ত দাবি করেছেন। অন্যদিকে রাশিয়া “যা দরকার, তা-ই সরবরাহ করার প্রস্তাব” দিয়ে ইরানকে সমর্থন করার ঘোষণা দিয়েছে; চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘উদ্বেগজনক উসকানি’ বন্ধে উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল; দুবাই, বাহরাইন ও কুয়েত সাময়িক স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে, তবে উড়োজাহাজ চলাচলে বিপুল ব্যাঘাত ঘটেছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে দ্রুত বেড়ে যাওয়া তেলের দাম আবার কিছুটা নেমে এলেও সমগ্র অঞ্চল জুড়ে অস্থিরতা রয়ে গেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে নিজ নাগরিকদের “উচ্চ সতর্কতা” অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে এক বিবৃতি জারি করেছে।

ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ অবসানের জন্য ১২ ঘণ্টার দু’দফা যুদ্ধবিরতির “চুক্তিতে” তিনি পৌঁছেছেন, যদিও তেহরান আনুষ্ঠানিকভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করেনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ “আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” এবং এর ‘প্রতিটি ধাপে’ জবাব দেবে তেহরান।

খামেনির সাম্প্রতিক বক্তৃতা ও পোস্টগুলোতে একটি কৌশলী সমন্বয় লক্ষ করা যায়—তিনি ইসরায়েলকে ‘শত্রু’ আখ্যা দিয়ে বারবার ‘শাস্তি’ জারি রাখার ঘোষণা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি অর্থে উচ্চারণ এড়িয়ে গেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এতে ইসরায়েল-কেন্দ্রিক ‘অক্ষ-এ প্রতিরোধ’ বার্তা স্ববেগে তুলে ধরা হলেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে একেবারে মুখোমুখি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য কৌশলগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে চান তিনি।

ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে জাতীয় সংহতির ডাক আরও জোরালো; পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাবে একমত হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে বিশ্ব পেট্রোলিয়াম বিপণনের ২০ ভাগেরও বেশি আংশিকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা “অসময়িকভাবে স্থগিত” হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছে।

ঘটনার ঘনঘটা-পূর্ব পরিস্থিতিতে ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব বরাবরের মতোই প্রচারযুদ্ধ-সহ প্রচলিত যুদ্ধ দুই পর্যায়েই এগোচ্ছে; ট্যাংক-বাজেট শঙ্কিত উপসাগরীয় মিত্ররাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যে মধ্যস্থতায় এগিয়ে এসেছে, আবার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লাভবান হওয়ার আশাতেও অনেকে সক্রিয়। পরিসংখ্যানগত তথ্য এখনো ভাসমান—তবে তেহরানে ও তেল আভিভে জ্বলন্ত আকাশ বলছে, এই সংঘাতের পরিণতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বহুপাক্ষিক জোট ও অর্থনীতিতেও সুদূরপ্রসারী অভিঘাত এনে দিতে পারে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেহরান-জেরুজালেম সমঝোতার কোনো স্থায়ী আভাস নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার আগে, খামেনির ‘শাস্তি’-র নীতি এবং ইসরায়েল-মার্কিন সামরিক জোটের পাল্টা পদক্ষেপ—দুই মিলিয়ে আরও বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কাই আপাতত প্রবল হয়ে উঠেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫