শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

আলোচনার নয়, প্রতিরোধের সময় — জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
  • ৩২ বার

প্রকাশ: ২০শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাত এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এর মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইউরোপের কূটনৈতিক কেন্দ্রে জেনেভায় পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হন।

তবে এটিকে তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন—এটি কোনো শান্তি আলোচনা নয়, বরং কেবল ইউরোপীয়দের বক্তব্য শোনার জন্যই তাঁর উপস্থিতি। তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট ছিল ক্ষোভ, দৃঢ়তা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে চলমান বাস্তবতার প্রভাব।

আব্বাস আরাঘচি বলেন, “প্রতিদিন আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হচ্ছে, বেসামরিক জনগণ নিহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কিংবা প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে আমরা কোনো আলোচনায় আগ্রহী নই। আলোচনা সম্ভব তখনই, যখন ইসরায়েলের আগ্রাসন থামবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দ্বার বন্ধ করে রাখিনি, কিন্তু খোলা রেখেছি এই কারণে নয় যে, আমরা মাথা নত করেছি। বরং এটি বিশ্বকে বোঝানোর জন্য যে, ইরান শান্তির কথা বলে, তবে সম্মানের সাথে।”

যে ইরানকে একসময় পশ্চিমা দুনিয়া ‘নিষিদ্ধ রাষ্ট্র’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, সেই ইরান আজ তার নিজস্ব সামরিক শক্তির উপর দাঁড়িয়ে আঞ্চলিক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাদের ওয়ারহেডযুক্ত অত্যাধুনিক মিসাইলগুলো এখন শুধু প্রতিরক্ষার উপকরণ নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকে এক জটিল বাস্তবতা সৃষ্টি করছে।

সামরিক সূত্র অনুযায়ী, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একটি ‘মাল্টি-স্টেজ অ্যাটাক সিস্টেম’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। একটি মিসাইল আকাশে উড্ডয়ন করার পর ভেতর থেকে একাধিক সাব-মিসাইল নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে ছুটে যায়। এই কৌশল ইসরায়েলের আয়রন ডোম সিস্টেমকে কার্যত অকার্যকর করে তুলেছে। বিশেষ করে সামরিক কমান্ড সেন্টার, সাইবার ডিফেন্স হাব এবং বিশেষ বাংকারগুলিতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানার ক্ষমতা এই প্রযুক্তিকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছে।

এছাড়া একাধিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, ইরানের হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভবন অচল হয়ে গেছে এবং অনেক কৌশলগত স্থাপনাও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সাইবার যোগাযোগে বিঘ্ন, ড্রোন কমান্ডের ব্যর্থতা এবং গোপন সামরিক গবেষণাগারে আগুন—সবকিছু মিলিয়ে ইসরায়েলের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হয়ে পড়ছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বক্তব্য আরও শঙ্কাজনক। তিনি বলেন, “এখনো আমরা আমাদের মূল শক্তি প্রয়োগ করিনি। এটি তো কেবল শুরু। সামনের দিনগুলো আরও ভয়ংকর হবে।” তার এই বক্তব্য যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন ও বিস্ফোরক অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক আঞ্চলিক সংঘাত নয়—বরং একটি বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যের পরিণত রূপ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আরব মিত্ররা যে ইসরায়েলের পাশে একত্র হয়েছে, তাও এই সংঘর্ষে ইরানকে থামাতে পারছে না। ইরানের প্রতিরোধ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এখন একটি নতুন পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে।

এই পরিস্থিতি শুধু ইসরায়েলের নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর দিকেও এক চরম বার্তা বহন করছে। ইরান এখন যে পথে হাঁটছে, তাতে বুঝা যাচ্ছে তারা এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা গড়ার পথে। শান্তি তখনই আসবে, যখন আক্রমণ থেমে যাবে—এটাই হয়তো আরাঘচির কূটনৈতিক বার্তার সারকথা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫