প্রকাশ: ১৮ই জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের দীর্ঘ ও অন্ধকার ইতিহাসে এবার নতুন এক মোড় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ছাত্রশিবিরের এক কর্মী গোলাম মর্তূর্জা নিহিমকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে। এ ঘটনাটি শুধু একটি নিখোঁজের মামলা নয়—এটি একটি দীর্ঘ সময় ধরে চলা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি, যার বিচারপ্রক্রিয়ার শুরু মানে বহুদিনের অপেক্ষার প্রতিফলন।
গোলাম মর্তূর্জা নিহিম ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন, এবং পরিবারের অভিযোগ ছিল স্পষ্ট—নিহিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিচয় গোপন করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে—কিন্তু একটুকরো আশার আলো পর্যন্ত দেখা যায়নি।
নিহিমের পরিবারের পক্ষে বহু বছর ধরে আইনি লড়াই চালানো হয়েছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোতে আবেদন করা হয়েছে, মিডিয়ায় বারবার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অবশেষে এই বছরের শুরুতে, একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও নতুন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার অপহরণ ও গুমের ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতা দেখতে পায়। এরপর তদন্তে উঠে আসে একজন শীর্ষ কর্মকর্তার নাম—র্যাবের তৎকালীন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েল।
গ্রেপ্তারের আদেশ আসার পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়, এবং প্রাথমিক শুনানির পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার বিচারক বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না। এই মামলার রায় হবে অন্যদের জন্য একটি বার্তা।”
এই ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়নের শিকার পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে যে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করে এসেছে, এই গ্রেপ্তার হয়তো সেই দীর্ঘ যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ। বিশেষ করে যেসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবস্থানে ছিলেন, সেগুলোতে বিচারপ্রাপ্তি এতদিন ছিল প্রায় অসম্ভবের মতো।
এই প্রক্রিয়াটি সামনে এগিয়ে গেলে, আরও অনেক লাশের খোঁজ পাওয়া যাবে, আরও অনেক অজানা রাতের ইতিহাস উন্মোচিত হবে। সুধী সমাজ বলছেন, শুধু সোহায়েল নয়—গুম, খুন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে একে একে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে, বহু বছরের মানবাধিকার আন্দোলন ও সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের কোনো মূল্য থাকবে না।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রাষ্ট্র যদি সত্যিকারের জবাবদিহির পথ বেছে নেয়, তবে এমন আরও অসংখ্য ‘নিহিম’ পরিবার একদিন তাদের প্রিয়জনের জন্য ন্যায়ের আলো দেখতে পাবে।
এই ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট—ন্যায়বিচার হয়তো ধীরগতির, কিন্তু যখন তা আসে, তখন সে ইতিহাসের দাগ মুছে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই বিচারিক প্রক্রিয়া কতদূর যায়, এবং কতটা নিরপেক্ষতা ও সাহস নিয়ে সামনের অধ্যায়গুলো রচিত হয়।