শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্ত্রী: ১২৪০টি বাড়ির মালিকানা, উঠছে কোটি কোটি টাকার প্রশ্ন

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫
  • ১৬১ বার

প্রকাশ: ১১ ই জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়, তবে এবারের অভিযোগটি যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ির মালিকানা অর্জনের অভূতপূর্ব রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী। তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তাঁরা একত্রে ১২৪০টি বাড়ির মালিক হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এর জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৬ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকার সমান।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকলেও, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি যেমন অবাধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করেছেন, তেমনই সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীর এই রেকর্ড আজ জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও শিক্ষার জন্য হাহাকার করছে, সেখানে একজন সাবেক মন্ত্রী কীভাবে এত অগাধ সম্পদের মালিক হলেন, এই প্রশ্ন এখন উঠেছে দেশজুড়ে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু ব্যক্তিগত দুর্নীতির চিত্র নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরে দেশের শাসকগোষ্ঠী যে উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে এসেছে, সেই “উন্নয়ন” আসলে ছিল নিজেরা ধনী হওয়ার প্রক্রিয়া মাত্র। জনগণের কাছে নানা স্লোগান, প্রতিশ্রুতি আর কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে, তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন বিদেশে বাড়ি কেনা, বিলাসবহুল জীবনযাপন নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতার বলয়ে নিজেদের সম্পদ সাম্রাজ্য গড়ে তোলা নিয়ে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং টেক্সাস; যুক্তরাজ্যের লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টার; আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবিতে এই সম্পদগুলো অবস্থিত। ওইসব দেশের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একাধিক বাড়ি কিনতে তাঁরা ব্যবহার করেছেন ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি ও ট্রাস্টের নাম, যা দুর্নীতি গোপন রাখার প্রচলিত একটি কৌশল।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নিছক একটি ব্যক্তির দুর্নীতির ঘটনা নয়, বরং এটা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকেছে, তাদের অনেকেই রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে রূপান্তরিত করেছেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো যদি নিরপেক্ষ ও পেশাদারভাবে তদন্ত করে, তবে এমন আরও অনেক বিস্ময়কর তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভূমি সংক্রান্ত নানা দুর্নীতি, দালালচক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারি খাস জমি দখল করে তা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করার মতো অভিযোগ বহুবার গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু সেসব অভিযোগ কখনোই পূর্ণ তদন্তের মুখ দেখেনি। বরং রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি বারবার দায় এড়িয়ে গেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে এখন বড় প্রশ্ন—এই উন্নয়ন কার জন্য? দেশের মানুষের জন্য, না কি শুধুই ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিগত বিলাসের জন্য? সুশাসনের দাবিতে জনগণ বহু বছর ধরেই সোচ্চার, কিন্তু যেভাবে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে এই ধরনের লুণ্ঠন চলছে, তা শুধুমাত্র দুর্নীতির নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও মর্যাদার বিষয়েও শঙ্কা জাগাচ্ছে।

আজ সময় এসেছে, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার। সময় এসেছে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার। এবং সময় এসেছে উন্নয়নের গল্পের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্যগুলো জনসম্মুখে আনার। রাষ্ট্র যদি এই প্রশ্নগুলোর জবাব না দেয়, তবে জনগণই একদিন তার উত্তর খুঁজে নেবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫