শিরোনাম :
“শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ” উত্তরা হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যে ক্ষমতাবান পুলিশ কর্মকর্তা: দেশে থেকে পালিয়ে গেলেন বিদেশে – বিচারহীনতার রহস্য তামিম ইকবাল রাজনীতিতে যাত্রা শুরু নিয়ে যা বললেন নগরভবনে মেয়র ইশরাকের সভা অনুষ্ঠিত, তিনি পেলেন শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯০ জন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো ইরান, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা নয় হজযাত্রী নিয়ে ভারতে উড়োজাহাজের চাকার সমস্যা, বের হলো ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাথে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ট্রাইব্যুনালে হাজিরি দেন সাবেক আইজিপি মামুন ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে জামায়াত: রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫
  • ১৪ বার

প্রকাশ: আজকের খবর অনলাইন | তারিখ: ৩০ মে ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা

গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ সালের নির্বাচনে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক মাইলফলক স্থাপন করেছে জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেল। আইন অঙ্গনের এ ঐতিহ্যবাহী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ১৬টি পদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা, তবে নেতৃত্বের মূল স্তম্ভ – সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদ জয় করে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে জামায়াতপন্থীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্বাচন শুধু গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বই নির্ধারণ করেনি, বরং এটি সামগ্রিকভাবে গাজীপুরের রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, জামায়াতপন্থী সবুজ প্যানেল থেকে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শামসুল হক ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান কামাল। এ দু’টি পদ ঐতিহাসিকভাবে আইনজীবী সমিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বদায়ী জায়গা হিসেবে বিবেচিত। তাঁদের পাশাপাশি সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন আকবরী (ফখরু), সদস্য আব্দুর রহিম ও মাহদী হাসান নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

অপরদিকে, বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও, নেতৃত্বের কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেননি। বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ, কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবুল কালাম আজাদ, লাইব্রেরি সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান রাসেল, অডিটর রবিউল আলম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ সালাহ্ উদ্দিন খান অপু, মহিলা সম্পাদিকা আজিজা আক্তার এবং সদস্য পদে জয়লাভ করেছেন মোঃ আসিফ রায়হান কাউসার, আশিকুর রহমান, কামরুল হাসান, ফাতেমা খান ও আলহাজ্ব মোঃ শ্যামল সরকার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ নির্বাচন কেবল পদের পরিসংখ্যান নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক জয়ের প্রতিচ্ছবি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মূলধারায় প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থান করা জামায়াত এবার আইনজীবী মহলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিজয়ী হয়ে সাংগঠনিকভাবে একধাপ এগিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এ ফলাফল স্থানীয় রাজনীতিতে জামায়াতের সক্রিয় ও সুসংগঠিত উপস্থিতিকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা বারের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের জয় এটাই প্রমাণ করে যে, তাঁরা সংগঠন পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস ও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি, এটি এক নতুন বাস্তবতার সূচনা।”

সামগ্রিকভাবে এ নির্বাচনের ফলাফল স্থানীয় রাজনীতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। গাজীপুর, যা বহু বছর ধরে মূলত বিএনপি-আওয়ামী লীগ দ্বৈরথের কেন্দ্রে ছিল, সেখানে জামায়াত এমন শক্তি নিয়ে ফিরে আসায় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচন সবসময়ই স্থানীয় রাজনীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। কারণ, এখানকার পেশাজীবী মহলের রাজনৈতিক ঝোঁক, মতাদর্শ ও সাংগঠনিক কাঠামো অনেক সময় বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যেখানে একটি প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও নেতৃত্বের আসনে আসতে পারেনি, সেখানে একটি দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গ রাজনৈতিক দল নেতৃত্বের আসনে জায়গা করে নিয়ে দৃশ্যমান প্রতীকী শক্তির জানান দিয়েছে।

এ বিজয় জামায়াতের জন্য যেমন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আইন অঙ্গনে মত-পথের নতুন বলয় তৈরি হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে। নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হবে এবং এই নেতৃত্ব কতটা কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সক্ষম হবে।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আইনজীবী সংগঠনগুলোর একটি, যেখানে নির্বাচন সবসময়ই উচ্চমাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। এবারের নির্বাচনে সেটি আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে জামায়াত ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে জামায়াতপন্থী প্যানেলের অগ্রগতি আগামী দিনে স্থানীয় রাজনীতিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে, নির্বাচনোত্তর সময়ে উভয় প্যানেলের বিজয়ী নেতারা একে অপরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং সমিতির কার্যক্রমে দল-মত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ নির্বাচন ছিল এক ধরনের ‘টেস্ট কেস’ — যেখানে প্রথাগত শক্তি ও উদীয়মান বলয়ের মধ্যে নতুন এক ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। এটি হয়তো গাজীপুরের রাজনৈতিক মাঠে ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫