প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক। আজকের খবর অনলাইন
পাকিস্তানের বিনোদন জগত এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। করাচির ডিফেন্স এলাকায় নিজ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর আলীর পচনধরা লাশ। জানা গেছে, মৃত্যুর অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন পর এই লাশ উদ্ধার হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং রহস্যে ঘেরা একটি করুণ পরিণতির ইঙ্গিত দেয়।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে করাচির ডিফেন্স ফেজ-৬ এর ইত্তেহাদ কমার্শিয়াল এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে পুলিশ ও আদালতের বেলিফের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে। আদালতের নির্দেশে বকেয়া ভাড়ার মামলায় উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে ফ্ল্যাটে যান কর্মকর্তারা। বারবার কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তখনই মেঝেতে পচে যাওয়া অবস্থায় অভিনেত্রীর মৃতদেহ দেখতে পায়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, হুমাইরা আসগর দীর্ঘ সাত বছর ধরে একা ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। তার মৃত্যুর পর এতদিন ধরে কেউ খোঁজ না নেয়ায় মৃত্যু নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থল থেকে ফোরেনসিক আলামত সংগ্রহ করেছে কর্তৃপক্ষ এবং লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সৈয়দ জানিয়েছেন, যখন লাশটি হাসপাতালে আনা হয় তখন তা ছিল সম্পূর্ণ পচন অবস্থায়। এই ধরনের পরিস্থিতি সাধারণত মৃত্যুর দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
অভিনেত্রীর এক প্রতিবেশী সংবাদমাধ্যমকে জানান, হুমাইরার চলাফেরা ছিল খুবই সীমিত এবং তিনি কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তার কোনো ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল না, যা তার নিঃসঙ্গ জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে। ফ্ল্যাট মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী, হুমাইরা ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করছিলেন না এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
হুমাইরা আসগর আলী পাকিস্তানের বিনোদন জগতে বেশ পরিচিত নাম ছিলেন। বিশেষ করে বিখ্যাত রিয়েলিটি শো ‘তামাশা ঘর’ এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘জালাইবি’তে তার অভিনয় দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে মূলধারার মিডিয়া থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছিলেন, তবু সোশ্যাল মিডিয়া ও সাবকালচারাল অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে তাকে দেখা যেত।
এই ঘটনাটি পাকিস্তানের সংস্কৃতি অঙ্গনে আবারও এক একাকী শিল্পীর অসহায় মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরল। বিনোদন দুনিয়ার আলো ঝলমলে পর্দার আড়ালে যে কত শিল্পী নিঃসঙ্গতায় হারিয়ে যান, হুমাইরার করুণ মৃত্যু যেন সেই বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
এই মৃত্যু স্বাভাবিক না আত্মহত্যা বা অন্য কোনো অপরাধমূলক ঘটনার ফল, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ চূড়ান্ত কিছু বলতে নারাজ। তবে এত দীর্ঘ সময় ধরে কেউ নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও তার খবর না থাকা সমাজের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
হুমাইরার মৃত্যু যেমন ব্যক্তিগত এক ট্র্যাজেডি, তেমনই সামাজিক উদাসীনতার একটি গভীর চিত্রও। শিল্পীর মূল্য শুধু মঞ্চে নয়, জীবনেও যত্ন ও সহানুভূতির দাবি রাখে—এই মৃত্যু সেই মানবিক দায়বদ্ধতার স্মারক হয়ে রইল।