প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব প্রতিবেদক | আজকের খবর অনলাইন
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার শান্ত পাহাড়ি পরিবেশ এক সকালে জড়িয়ে গেল শোকের ছায়ায়। ইসলামপুর জামতলা এলাকায় দুটি সিএনজি-চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন মো. হানিফ মিয়া (৫৮) নামের এক মাছ ব্যবসায়ী। সকাল ৯টায় ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনা মুহূর্তেই নিভিয়ে দেয় একটি পরিবারের একমাত্র আশ্রয় ও নির্ভরতার আলো।
নিহত হানিফ মিয়া চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়ম নগর পরস পাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত আলী আহম্মদের পুত্র। প্রতিদিনের মতোই তিনি রাঙুনিয়া চৌমুহনী থেকে রাজস্থলীর পথে যাত্রা করেছিলেন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ইসলামপুর জামতলা এলাকায় পৌঁছেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে মুহূর্তের ব্যবধানে। সংঘর্ষটি এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে হানিফ মিয়া গুরুতরভাবে আহত হন এবং সঙ্গে থাকা অপর আরোহীও জখম হন। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সময় হানিফ মিয়ার জন্য আর অপেক্ষা করেনি।
চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং নিশ্চিত করেন যে, হানিফ মিয়াকে হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মরদেহ ইতিমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে শেষবিদায়ের জন্য।
এই ঘটনায় রাজস্থলীর শান্ত জনজীবনে একধরনের অস্থিরতা ও শোকের আবহ নেমে এসেছে। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, দুর্ঘটনাটি এড়ানো যেত যদি চালকেরা একটু বেশি সচেতন হতেন। পাহাড়ি অঞ্চলের সরু ও আঁকাবাঁকা সড়কপথে গতি নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের ভারসাম্য এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলাই হতে পারে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
মো. হানিফ মিয়া ছিলেন একজন নিরলস পরিশ্রমী মাছ ব্যবসায়ী, যিনি পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি সামাজিক কাঠামোও। তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নবিদ্ধ, আর পরিবারটি পড়েছে গভীর দুঃখ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এ ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা পাহাড়ি এলাকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং যথাযথ সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবকে আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রতিদিনের অসতর্কতা এবং তদারকির ঘাটতি কীভাবে একটি জীবন, একটি পরিবার, এমনকি একটি সমাজকেও কাঁদিয়ে দেয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকল রাজস্থলীর এই সড়ক দুর্ঘটনা।
এই মৃত্যু যেন শুধু একটি দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত না হয়—বরং এটি হোক সতর্কবার্তা, হোক সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক কঠিন প্রতিজ্ঞা।