শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

মায়ের জন্য হারানো পরীক্ষা: হৃদয়বিদারক ঘটনার পর শিক্ষার্থীর ভাগ্য এখন বিবেচনাধীন

আজকের খবর অনলাইন
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৬৩ বার
মায়ের জন্য হারানো পরীক্ষা: হৃদয়বিদারক ঘটনার পর শিক্ষার্থীর ভাগ্য এখন বিবেচনাধীন

প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনেই রাজধানীর একটি কেন্দ্রের বাইরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য, যা শুধু একটি পরীক্ষার গল্প নয়—বরং মানবিকতার এক কঠিন প্রশ্নচিহ্ন হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সাধারণত জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। এবারের ২০২৫ সালের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী। কিন্তু এই লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনের গল্প ছুঁয়ে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়। সেই শিক্ষার্থী, যিনি সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি মায়ের স্ট্রোকের মতো জীবনমরণ পরিস্থিতির কারণে। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই শিক্ষার্থী দেড় ঘণ্টা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালেও তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

পরীক্ষার্থীর খালা গণমাধ্যমকে জানান, মেয়েটির বাবা নেই, এবং মায়ের আকস্মিক মেজর স্ট্রোক হওয়ায় ঘর-সংসারের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে মেয়েটি নিজেই। সকালবেলা হাসপাতালে নিয়ে যান অসুস্থ মাকে, আর সেখান থেকে সোজা ছোটেন পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে—যেখানে অপেক্ষা করছিল বাংলা প্রথম পত্রের জীবন গঠনকারী সেই পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষাকক্ষের গেট তাকে রক্ষা করতে পারলো না; বরং নিয়মের কড়াকড়িতে ভেঙে পড়ে তার স্বপ্ন। গেটের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই ছাত্রী, যাকে শতাধিক অভিভাবক, পথচারী, এমনকি সহপাঠীরাও অবাক চোখে দেখেছেন—নির্বাক, কষ্টের বাষ্পে ভারী হয়ে ওঠে সেই মুহূর্তের বাতাস।

এই ঘটনাটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে হাজারো মানুষ ক্ষোভ, দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। বহু শিক্ষানুরাগী, অভিভাবক ও শিক্ষক প্রশ্ন তোলেন—এমন মানবিক পরিস্থিতিতে কি একটু সহানুভূতি, একটু মানবিক ব্যতিক্রম রাখা যেত না? মেয়েটি কি শখ করে দেরি করেছিল? নয় কি দায়িত্বের চরমতম পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়েও ফিরেছে খালি হাতে, শুধুমাত্র ‘নিয়ম’ নামের কঠিন বাঁধায়?

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অবশেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও। শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার শুক্রবার (২৭ জুন) ‘চীফ অ্যাডভাইজার (জিওবি)’ নামক একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান, ঘটনাটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত আইন ও বিধির আলোকে সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরা তার এই দুঃসময়ে সমব্যথী। ওই শিক্ষার্থীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

সিআর আবরারের এই বিবৃতি স্বস্তি জাগালেও এখনো পরিষ্কার নয়, ওই শিক্ষার্থীকে আদৌ সুযোগ দেওয়া হবে কি না। কারণ, পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের নিয়মকানুন বরাবরই কঠোর। নির্ধারিত সময়ের পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বিধান এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনাটি একটি নজির হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ভবিষ্যতে, যেখানে মানবিক বিপর্যয় ও দুর্যোগের সময়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি আলাদা নীতিমালা বা ব্যতিক্রম ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

শিক্ষার্থীর প্রতি এই সমব্যথিতা কেবল তার জন্য নয়, বরং এটি একটি পুরো প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা—যাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় পড়ালেখার পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে। এই ঘটনায় আমাদের সমাজ, প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষ থেকে আসা প্রতিক্রিয়া কেবল একটি মেয়ে শিক্ষার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, বরং এটা হয়ে উঠবে মানবিকতার এক বাস্তব মাপকাঠি।

এখন শুধু অপেক্ষা—বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নেয়। কি জয়ী হয় শেষ পর্যন্ত—নিয়মের অন্ধ আবরণ, না কি এক মেধাবী, সংগ্রামী মেয়ের জীবনের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও মানবিক সহমর্মিতা?

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫