প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়কালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাটি এক সময় পুরো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার তদন্তের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে ৩০ জনের জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যা এই মামলার গুরুত্ব ও জটিলতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। আজই এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র প্রসিকিউশন বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ গত ১৫ জুন এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিলেন এবং একইসঙ্গে শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন ধার্য করেছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করায় প্রসিকিউশন বিভাগের কার্যক্রম এখন আরও দ্রুত গতিতে এগোবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবু সাঈদের মৃত্যু ঘটে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, যখন কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ ওই আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সংগঠক ছিলেন। সেদিন দুপুরে রংপুর শহরের পার্ক মোড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তিনি ছিলেন নিরস্ত্র এবং আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, দেশজুড়ে বিস্তৃত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
আবু সাঈদের মৃত্যুকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ দানা বাঁধে। তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যু কেবল ছাত্রসমাজেই নয়, বরং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়, এবং ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছায় এবং শেষপর্যন্ত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান বলে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত এবং বিচারিক কার্যক্রম শুধু একটি হত্যার বিচার নয়, বরং দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের আইন ও শাসন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এই মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হওয়ায় বিষয়টি কেবল দেশের ভিতরেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বিশেষ মনোযোগ পাচ্ছে। নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর এখন দেশবাসী তাকিয়ে আছে, কবে নাগাদ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে এবং এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে কি না। আদালত যদি নিরপেক্ষভাবে ও দ্রুততম সময়ে মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে পারে, তবে তা ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্যায় রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পথে দেশের এগিয়ে চলাকে আরও এক ধাপ সামনে এগিয়ে দেবে।