প্রকাশ: ২৫শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
জাতীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় তরুণ সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “যদি তরুণরা এগিয়ে আসে, তাহলে গোটা দেশ তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করবে। কারণ তারাই পারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে।”
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশের খ্যাতনামা পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, “গত বছরের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে তরুণরাই জাতিকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছে। আজকের সেই তরুণদের শক্তি ও সৃজনশীলতা এখন পরিবেশ রক্ষায়ও প্রয়োজন। পরিবেশের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে মানুষ নিজেই। এই যুদ্ধের ফলেই আজ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার এমন এক সর্বনাশা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নদীর পাড়ে মাটি খুঁড়লে ৪-৫ ফুট নিচেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসব বস্তু প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যায় না, তাই জীববৈচিত্র্যের জন্য তা মারাত্মক হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিকের জন্ম আছে, কিন্তু মৃত্যু নেই। তাই আমাদের এখনই এসবের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে নিজের জীবনকে ধ্বংস করা মানে আত্মঘাতী পথে পা বাড়ানো।”
সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণ কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দায়িত্ব নয়, বরং এটি আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। সকলকে পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে এসে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরও বৃহৎ পরিসরে প্রচার ও কার্যক্রম পরিচালনার তাগিদ দেন। তরুণদের অংশগ্রহণে জাতীয়ভাবে একটি সবুজ বিপ্লব ঘটানোর লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে তরুণদের সম্পৃক্ত করার একটি নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হলো—যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।