প্রকাশ: ১৭ই জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক চরম মোড়ের দিন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র দুই দিন পর, ৭ আগস্ট, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে দাঁড়িয়ে দলীয় কিছু নিবেদিতপ্রাণ নেতা ও কর্মী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য শপথ গ্রহণ করেন। এই প্রতীকী রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামনে আসেন মোঃ জিয়াউর রহমান নামের এক ব্যক্তি—যিনি বর্তমানে আবার আলোচনার কেন্দ্রে।
প্রথম দৃষ্টিতে সাধারণ কর্মী মনে হলেও, অনুসন্ধানে উঠে আসে তার আর্থিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ঘিরে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। ‘বে ফুটওয়্যার লিমিটেড’ সহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক এই জিয়াউর রহমানই ছিলেন ৫ আগস্ট পরবর্তী শ্রমিক আন্দোলন, প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং আনসার বাহিনীর কিছু অংশের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ানোর মতো ঘটনায় অর্থায়নের অন্যতম উৎস বলে দাবি করেছেন একাধিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।
২০২৫ সালের মে মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল জাপানে গমন করে। সেই প্রতিনিধি দলে জিয়াউর রহমানের অন্তর্ভুক্তি রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। প্রশ্ন ওঠে—কে তাকে সেই জায়গায় স্থান করে দিয়েছে? আর কেন?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই জিয়াউর রহমান দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। শরীয়তপুর থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতিও চলছিল বলে জানা যায়। তাঁর পিতা মরহুম শামসুর রহমান ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যার সুবাদে সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল বরাবরই গভীর।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, এক সাবেক সেনাপ্রধানের মধ্যস্থতায় জিয়াউর রহমান একটি নতুন রাজনৈতিক দলকে গোপনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের কোনো পদে নেই, তথাপি তাঁর আর্থিক প্রভাব সেই দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই সাবেক সেনাপ্রধান ও ওই দলের যুগ্ম সদস্য সচিবের তৎপরতায় জিয়াউর রহমান জাপান সফরে শুধু অংশগ্রহণই করেননি, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবেও পরিচিত হন।
এই ঘটনাটি দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে অর্থশক্তি এবং অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক কীভাবে ভূমিকা রাখে, তা স্পষ্ট করে তোলে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কোনো ব্যক্তি কীভাবে অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারেন, এই ঘটনা তার একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ধরণের ব্যক্তি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিদেশ সফরকারী দলে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার আগে তার রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক পটভূমি যাচাই করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্লেষকরা।