শিরোনাম :
তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে? মির্জা ফখরুল জানালেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত

ভারতে পালাতে গিয়ে বেনাপোলে গ্রেপ্তার গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
  • ৬০ বার

প্রকাশ: ১০ ই জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি. এম সাহাবউদ্দিন আজম। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন এলাকায় তাকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের অন্তত দুটি থানায় একাধিক মামলা থাকায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, জি. এম সাহাবউদ্দিন আজমের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর থানায় সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হলো সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা, সরকারি যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তার নাম তালিকাভুক্ত হয়। পাশাপাশি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায়ও তার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

ইমিগ্রেশন পুলিশের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি তার স্ত্রীসহ বেনাপোল সীমান্তে উপস্থিত হয়ে ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট জমা দেন। পাসপোর্ট যাচাই-বাছাইয়ের সময় দেখা যায়, তার নামে ‘স্টপলিস্ট’ জারি রয়েছে, যার মাধ্যমে তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্ত্রী সঙ্গে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন মুন্সী জানান, পূর্ব থেকেই সম্ভাব্য পালানোর আশঙ্কায় তার বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। ফলে, তিনি যখন চেকপোস্টে পৌঁছান, তখনই সতর্ক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার পরিচয় নিশ্চিত করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকে পরে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে তাকে হেফাজতে নিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জে প্রেরণ করা হবে, যেখান থেকে মূল মামলাগুলো দায়ের হয়েছে।”

এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও দেখা গেছে প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, দলের শৃঙ্খলা ও আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তবে এই বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেভাবে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। এটি শুধু দলীয় সংকটের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষেরও প্রতিফলন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই ঘটনার নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। দলের পদ-পদবী দিয়ে অপরাধ ঢেকে রাখা যায় না।”

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, বিশেষ করে বেনাপোল-হরিদাসপুর সীমান্ত পথ, অতীতে বহুবার নানা অপরাধ ও পলাতক ব্যক্তিদের পালানোর রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে এখন সেই পথ আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে।

জি. এম সাহাবউদ্দিন আজমের এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক অঙ্গনে ও প্রশাসনিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকের মতে, এটি ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের শুদ্ধি অভিযান শুরু করার একটি সংকেত হতে পারে, যদিও সেটি কতটা বাস্তবায়িত হয়—তা সময়ই বলে দেবে।

তবে আপাতত, জনমনে প্রশ্ন একটাই—যে ব্যক্তি এতদিন এলাকায় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, তার এই আচমকা গোপন পালানোর চেষ্টার পেছনে আর কী কী কারণ লুকিয়ে আছে?

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫