প্রকাশ: ১০ই জুন, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চার দিনের সরকারি সফরে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমন কূটনৈতিকভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশি প্রবাসী সমাজেও সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর এক পরিবেশ। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, কূটনৈতিক বৈঠক এবং নাগরিক সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই সফরের প্রতিটি ধাপ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকরা। এই উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, যুক্তরাজ্য সরকার এবং রাজপরিবার কতটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই সফরকে।
তবে সফরকে ঘিরে কিছুটা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিমানবন্দর ও হোটেলের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা গেছে। যদিও স্থানীয় পুলিশ বিভাগ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেই অনুমতি দেয়নি। আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বিকল্পভাবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে।
অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূসের আগমন উপলক্ষে লন্ডনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার সম্মানে আজ স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক শহীদ আলতাব আলী পার্কে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রবাসী সমাজে আনন্দঘন আবহ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গীরা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সফরের শুরু থেকেই এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এই সফর কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য সফর নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে গঠিত এক উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি। গত ৪ জুন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, অধ্যাপক ইউনূস এই সফরে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সফরকালে আরও সাক্ষাৎ হবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে—প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের শ্রদ্ধা এবং তার বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি। এবারের সফরে রাজা তৃতীয় চার্লস অধ্যাপক ইউনূসকে ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এ ভূষিত করবেন। এই সম্মাননা শান্তি, পরিবেশ ও মানবসম্প্রীতির ক্ষেত্রে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করা হবে। আগামী ১২ জুন লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী সেন্ট জেমস প্যালেসে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
এই সফর বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ড. ইউনূসের ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি, এটি প্রমাণ করে যে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবিক উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস এখনো বিশ্বমঞ্চে এক প্রভাবশালী ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।