প্রকাশ: ০৭ই জুন’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
কেবল রাজনৈতিক শ্লোগানে নয়, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হলে প্রয়োজন কাজের বাস্তবতা, প্রয়োজন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বৃষ্টিভেজা ঈদের দিনে এমনই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। ঈদের দিন সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ছাতা বা গা ঢাকা দেওয়ার কোনো চেষ্টা না করে, তিনি নিজ হাতে কোরবানির গোশতের প্যাকেট নিয়ে ছুটে যান এক ঘর থেকে আরেক ঘরে—জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের পরিবারের দোরগোড়ায়।
শনিবার দুপুরে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও পোস্ট করেন হাসনাত। সেখানে দেখা যায়, তিনি ভিজে ভিজে পলিথিন মোড়ানো গোশতের প্যাকেট হাতে নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। কারও দরজায় কড়া নাড়ছেন, কারও হাতে গোশত তুলে দিচ্ছেন বিনয়ের সাথে, আবার কখনও বৃদ্ধ মায়েদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন কোমল কণ্ঠে।
এই দৃশ্য খুব দ্রুতই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ প্রশংসা করে তাঁর এই সেবাধর্মী কর্মপ্রচেষ্টার। তবে এই কাজ শুধু করুণার নয়, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক ও মানবিক বার্তাও বহন করে—যে আদর্শে কেউ একদিন জীবন দিয়েছেন, সেই আদর্শের স্মরণে আজও কেউ একজন নিরবে মাথা নিচু করে হাঁটছেন, সেই শহীদদের পরিবারের সম্মান রক্ষা করে যাচ্ছেন।
হাসনাত তাঁর পোস্টে লেখেন:
“আমরা আমাদের জুলাই বিপ্লবের ১৪ জন শহীদ এবং ৬০ জন আহত ভাইবোনের পরিবারের সঙ্গে কোরবানির আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেছি। যে আদর্শে শহীদরা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তা যেন আমরা সর্বদা হৃদয়ে ধারণ করি।”
তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজনৈতিক আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ১৪ জন, আহত হন অন্তত ৬০ জনের বেশি। জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের ভাষায় একে বলে ‘জুলাই বিপ্লব’। এ সংঘর্ষ ও প্রতিবাদে প্রাণ দেওয়াদের স্মরণে এনসিপি প্রতিবছর নানা কর্মসূচি পালন করে। তবে এই বছরের আয়োজনটি ছিল একেবারে মানবিকতার ছোঁয়ায় ভরপুর।
ঈদের দিন এমনিতেই প্রভাবশালী নেতারা দলীয় অফিসে বসে শুভেচ্ছা বিনিময়ে সময় কাটান। কিন্তু হাসনাত আবদুল্লাহ ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। তিনি চারটি গরু কোরবানি দিয়ে তার গোশত পুরোপুরি বরাদ্দ করেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য। কোনো প্রচার ছাড়াই নিজে এগিয়ে যান বিতরণে, সঙ্গে নেন স্থানীয় কিছু কর্মীকে। বৃষ্টি, কাদা, ভেজা রাস্তাও থামাতে পারেনি এই উদ্যোগকে।
স্থানীয় এক বৃদ্ধ শহীদের মা জানান,
“হাসনাত আমার ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই আমাদের পাশে আছে। সরকার থেকে কেউ কিছু দেয় না, দিচ্ছে এরা। আজ ঈদের দিনও ভিজে ভিজে এলো, আমার কাছে এই ছেলেটাই বড়।”
এই বক্তব্যগুলো রাজনীতির যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মানবিক রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে। যেখানে জনগণের পাশে দাঁড়ানোই নেতার আসল পরিচয়, সেখানে হাসনাতের মতো মানুষেরা হয়ে উঠছেন নতুন ধরণের রাজনৈতিক চেতনার প্রতীক।
বর্তমান সময়ে যখন রাজনীতি অনেকাংশে সুবিধাবাদ ও কৌশলের নামে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে উঠছে, তখন এমন কিছু মানুষ নিরবে তাদের কাজ দিয়ে মনে করিয়ে দেন—আদর্শ কোনো শব্দ নয়, তা আচরণে প্রতিফলিত হয়। শহীদদের স্বপ্ন কখনও ম্লান হয় না, যদি কেউ তাঁদের উত্তরাধিকার বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলে।
আজকের খবর অনলাইন মনে করে, এই ধরনের উদ্যোগগুলো কেবল দলীয় মহিমা নয়, বরং জাতীয় মানবিক চেতনার প্রতিফলন। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না—যদি সেই রক্ত স্মরণে থাকে একজন হাসনাতের মতো মানুষের নিষ্ঠায়, চোখের জলে, এবং ঈদের দিন বৃষ্টিতে ভিজে কোরবানির গোশত পৌঁছে দেওয়ার পরম শ্রদ্ধায়।