প্রকাশ: ০৫ই জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং দলটির আরেক শীর্ষ নেতা শামসুজ্জামান দুদুকে সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করেছে দলীয় হাইকমান্ড। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এ দুই নেতার কাছে পৃথকভাবে সতর্কবার্তাসূচক চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বুলু ও দুদুর সাম্প্রতিক বক্তব্যে দলের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এসব বক্তব্য দলের ভেতরে যেমন বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে, তেমনি বহির্বিশ্বে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মত দিয়েছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। দলের কৌশলগত অবস্থান ও বিবেচনাকে উপেক্ষা করে এমন বক্তব্য বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বরকত উল্লাহ বুলুর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে মন্তব্য করা হয়, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস এক সময় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কবে তিনি আবার মুসলিম হলেন, তা জানা নেই।” তার এ বক্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার অধিকাংশই নেতিবাচক।
এছাড়াও তারেক রহমানের বিষয়ে বরকত উল্লাহ বুলুর এক বক্তব্যও সমালোচিত হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে ওজু করতে হবে।” এই ধরনের মন্তব্যকে অনেকেই দলীয় নেতৃত্বকে ব্যক্তিপূজায় রূপান্তরের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
অপরদিকে, শামসুজ্জামান দুদুও বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেননি। সম্প্রতি তিনি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সম্পর্কে বিতর্কিত ভাষায় মন্তব্য করে বলেন, “প্রস্রাব করে দিলে তারা ভেসে যাবে।” এর আগে তিনি সরকারের উদ্দেশে হুমকিসূচক বক্তব্য দিয়ে বলেছিলেন, “সরকার যদি নির্বাচন না দেয়, তাহলে নিজেরাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করব।”
বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, দল এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকাল পার করছে। একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন, অন্যদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রয়াস—এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের বক্তব্য হতে হবে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও পরিমিত। কিন্তু দলীয় অবস্থান স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও এসব শীর্ষ নেতার অতি আবেগপ্রবণ ও দায়িত্বহীন বক্তব্য দলকে অপ্রত্যাশিত বিতর্কে জড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি বরকত উল্লাহ বুলু ও শামসুজ্জামান দুদুকে সরাসরি সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে গণমাধ্যমে কিংবা জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সংযম ও পরিমিতিবোধ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এর পরেও কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মন্তব্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির সামনে এখন সময় এসেছে দলীয় শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে দলের ভেতরকার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং দলীয় নেতাদের জনসমক্ষে দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য করবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ সতর্কবার্তা শুধু দুই নেতার প্রতি নয়, বরং পুরো দলের নেতাকর্মীদের জন্য একটি বার্তা—যা স্পষ্ট করে দেয়, বিএনপি এখন কৌশলগত পরিণত আচরণের পথে হাঁটতে চায়।