প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গন যখন অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি, তখনই দৃশ্যপটে আবারও দৃপ্ত পদক্ষেপে হাজির হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক বিশেষ অনুষ্ঠান, যেখানে প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। তাঁর উপস্থিতি শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের রাজনীতিতেও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
বিকেল তিনটায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিএনপি তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার দিকনির্দেশনা তুলে ধরতে চায়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই, আর সেই ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন খালেদা জিয়া।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, “বিএনপি কখনোই হিংসা নয়, বরং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ পথে বিশ্বাস করে। গণঅভ্যুত্থান আমাদের সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক অধিকারেরই একটি বিকাশ।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যিনি বলেন, “আজকের সমাবেশ প্রমাণ করছে, জনগণ আবারও একটি নতুন গণতান্ত্রিক পথের অপেক্ষায়।”
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই আয়োজনে অংশ নেন বহু জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও, অতীত রাজনৈতিক আন্দোলনে যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন সেই শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। তাঁদের কণ্ঠে উঠে আসে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস, প্রত্যাশা এবং ভবিষ্যতের জন্য এক দৃঢ় সংকল্প।
অনুষ্ঠানজুড়ে বারবার উচ্চারিত হয়েছে “জাতীয় ঐক্য” এবং “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার”—এই দুইটি শব্দ। খালেদা জিয়ার উপস্থিতি যেন সেই প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক দূরত্ব ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁর দৃঢ় মনোবল বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নবউদ্দীপনা ছড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে এই আয়োজন এবং খালেদা জিয়ার সরাসরি অংশগ্রহণ এক নতুন দিকচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশ যদি গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করে এবং সহনশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে, তবে তা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
এই অনুষ্ঠান কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের আহ্বান নয়—এটি সম্ভবত একটি বৃহত্তর আহ্বান, যার কেন্দ্রে রয়েছে জনগণ, গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ।