প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা
আজকের খবর অনলাইন
মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার হঠাৎ মৃত্যুতে শোকাহত পুরো ভারতীয় বিনোদন অঙ্গন। ‘কাঁটা লাগা’ গানের সেই প্রাণবন্ত, সাহসী চেহারাটি আজ শুধু স্মৃতির পাতায়। মাত্র ৪২ বছর বয়সে আচমকা বিদায় নিয়েছেন এই তারকা। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী পরাগ ত্যাগী, পরিবারের সদস্য, এবং ঘনিষ্ঠজনেরা।
তবে মৃত্যুর এই সংবাদ যতটা আকস্মিক, ততটাই বেদনাদায়ক এক অসমাপ্ত স্বপ্নের কথাও সামনে এনেছে। জানা গেছে, শেফালি চেয়েছিলেন মা হতে। তবে জীবনের গতানুগতিক পথে নয়—নিজের গর্ভে নয় বরং একটি কন্যাসন্তান দত্তক নিয়েই মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন তিনি। শেফালির এই চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষা এক গভীর মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন, যা আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে আরও গভীরভাবে নাড়া দিচ্ছে অনুরাগীদের হৃদয়।
বলা হয়ে থাকে, শেফালি এই স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওনের কাছ থেকে। সানি যখন কন্যাসন্তান নিশাকে দত্তক নেন, সেই ঘটনা তাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেন, “সানি যেভাবে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা আমাকে স্পর্শ করেছিল। আমি তখনই ঠিক করেছিলাম, একদিন আমিও এক কন্যাশিশুর জীবন বদলে দেব।”
এই সিদ্ধান্ত শুধুই আবেগের জায়গা থেকে নয়, ছিল এক প্রকার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও। শেফালির বিশ্বাস ছিল, সমাজে এমন অসংখ্য শিশু রয়েছে, যারা পরিবার ও ভালোবাসার অভাবে বেড়ে উঠছে। তিনি বলতেন, “আমি সৌভাগ্যবান যে ঈশ্বর আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তাই আমি চাই সেই আশীর্বাদ কাউকে ভাগ করে দিতে। একটা শিশুর জীবন বদলাতে পারাটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
‘বিগ বস ১৩’-এর সময়েও শেফালি তার মা হওয়ার এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সহপ্রতিযোগীদের সঙ্গে। হিন্দুস্তানি ভাউ-এর সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপচারিতা করেছিলেন, যা তখনকার অনেক দর্শকের মনেও ছাপ ফেলেছিল। পরে নিজের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ ইচ্ছার কথা আবারও বলেন তিনি। তখন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি এবং তা নিয়ে স্বামীর পূর্ণ সমর্থনও পেয়েছিলেন।
পরাগ ত্যাগী, শেফালির স্বামী এবং অভিনেতা, সবসময়ই ছিলেন তার পাশে। শেফালির ভাষ্যমতে, “আমি যখন পরাগকে বলেছিলাম দত্তক নেওয়ার ইচ্ছার কথা, ও এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করেনি। বলেছিল, তুমি যদি সন্তান ধারণ করতে চাও, আমি আছি। তুমি যদি দত্তক নিতে চাও, তাহলেও আমি তোমার পাশে আছি।” এই মানসিক সমর্থন ছিল শেফালির কাছে অমূল্য। একথা তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন বহুবার।
কিন্তু এই সুন্দর পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেওয়ার আগেই থেমে গেল সব। যে জীবন এতটাই মানবিক, সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল ছিল, সেই জীবনেই মৃত্যু এসে আঘাত হানল এক নির্মম বাস্তবতা হয়ে। তার স্বপ্ন, পরিকল্পনা—সবই এখন অপূর্ণতার ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার প্রিয়জনদের মাঝে।
শেফালির হঠাৎ বিদায়ে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগ ছড়িয়ে পড়েছে, তা প্রমাণ করে তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা কতটা গভীর ছিল। একদিকে যেমন তিনি ছিলেন বিনোদন জগতের সাহসী ও উজ্জ্বল মুখ, অন্যদিকে তার এই মানবিক দিকটি তাকে আরো আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। অনেকে বলছেন, শুধুমাত্র মঞ্চের আলোতেই নয়, জীবনের অন্ধকার প্রান্তেও আলো ছড়াতে চেয়েছিলেন শেফালি।
আজ হয়তো সে আলো নিভে গেছে, কিন্তু তার স্বপ্নের জ্যোতি অনেক হৃদয়ে রয়ে যাবে চিরকাল। দত্তক সন্তান নেওয়ার মতো একটি মানবিক পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেফালি সমাজে এমন এক বার্তা রেখে গেছেন, যা ভবিষ্যতের অনেককেই প্রেরণা জোগাবে।
জীবন চলে যায়, মানুষ চলে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন থেকে যায়, কিছু আকাঙ্ক্ষা হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক। শেফালির মা হওয়ার অপূর্ণ স্বপ্নও ঠিক তেমনি—এক মানবিক স্বপ্ন, যেটা তার চলে যাওয়া সত্ত্বেও মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত থাকবে অনেক দিন ধরে।