প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক | আজকের খবর অনলাইন
বলিউডে এক অকালপ্রয়াণে নেমেছে গভীর শোক। ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ খ্যাত অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে তার সহকর্মী, অনুরাগী এবং পরিবারের সদস্যরা। শোকের মধ্যেও রবিবার আরব সাগরের উত্তাল জলে শেষবারের মতো স্ত্রীকে বিদায় জানালেন তার স্বামী পরাগ ত্যাগী। এই বিদায়ের মুহূর্ত ছিল আবেগঘন, হৃদয়বিদারক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে তা, হয়ে ওঠে ভাইরাল।
বিস্তৃত তটরেখা আর বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন পরাগ—একজন বিধ্বস্ত স্বামী। শরীরে ডোরাকাটা শার্ট, হাঁটু গুটানো জিন্স, মাথায় এলোমেলো চুল, বাঁধা হেয়ারব্যান্ডে—সব মিলিয়ে তিনি যেন এক অপূর্ণতা ও বেদনার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেফালির অস্থিভস্ম সাগরে ভাসিয়ে দেন তিনি। মুহূর্তটিতে অনর্গল কান্নায় ভেঙে পড়েন পরাগ। স্ত্রীকে চিরবিদায় জানানোর পর তাঁর পক্ষে সোজা হয়ে হাঁটাও সম্ভব হচ্ছিল না।
৪২ বছর বয়সে শেফালির আকস্মিক মৃত্যু শুধু বলিউড নয়, সাধারণ মানুষের মনেও তৈরি করেছে হতবাক করা বিস্ময় ও সংশয়। মাত্র ২৭ জুন রাতে মৃত্যু হয় এই সাবেক অভিনেত্রীর। পুলিশ এখনো তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলেই উল্লেখ করছে, যদিও একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখনও চলছে।
নিউজ১৮-র বরাতে জানা গেছে, মৃত্যুর দিন সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মতো কিছু ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন শেফালি। এর মধ্যে ছিল একটি ইনজেকশনও, যা তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করছিলেন বয়স কমানোর চিকিৎসা হিসেবে। অ্যান্টি-এজিং থেরাপির অংশ এই ইনজেকশন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত গ্রহণ করতেন তিনি।
রাতের দিকে হঠাৎ করেই শেফালির রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে নেমে যায়। শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনাটি তদন্ত করছে মুম্বাইয়ের আম্বলি থানার দুইটি বিশেষ দল। ইতোমধ্যেই কপার হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ ৭টি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং কথা বলেছে শেফালির পরিবার ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে—যাঁদের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ফার্মেসির কর্মীসহ অন্তত ১৪ জন ব্যক্তি।
বলিউডে ‘কাঁটা লাগা’ গানে অভিষেকের পর থেকেই শেফালি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ সময় নানা রিয়েলিটি শো-তেও অংশ নেন, যেখানে তার স্বামী পরাগ ত্যাগীও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। বাস্তব জীবনের দুঃখ, আনন্দ, সংঘাত আর প্রেম—সবই একসঙ্গে ভাগ করে নেওয়া এই জুটি বলিউডে প্রশংসিতও হয়েছেন।
কিন্তু শেফালির এই অকালপ্রয়াণ পরাগ ত্যাগীকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে। শ্মশানে স্ত্রীর দেহ দাহ করার সময়ই চোখে জল নিয়ে ছলছল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আর সাগরের জলে অস্থিভস্ম ভাসিয়ে দিতে দিতে যেন ভাসিয়ে দিলেন জীবনের সবটুকু আশ্রয়ও।
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলছেন, অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা, সৌন্দর্য চর্চা ও শরীর সচেতনতার নামে যে চিকিৎসাগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সেগুলোর প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও গভীরভাবে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। একজন প্রাণবন্ত শিল্পীর জীবন চলে যাওয়া কেবল একটি পারিবারিক শোক নয়—এটি সমাজের এক বৃহৎ আত্মজিজ্ঞাসারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন প্রিয়জনের এমন অপ্রত্যাশিত চলে যাওয়া যে কতটা যন্ত্রণা বহন করে, তা যেন পরাগ ত্যাগীর সেই সাগরতীরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষতের মতো দৃশ্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শেফালির বিদায় বলিউডের এক উজ্জ্বল মুখ হারানোর শোক হলেও, তার বিদায়ের দৃশ্য হয়ে রইল একটি সময়ের আবেগঘন চিহ্ন, যা মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।