শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক: ৫ আগস্টকেই ঘোষণার দাবি জামায়াত আমিরের

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৯ বার
‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক: ৫ আগস্টকেই ঘোষণার দাবি জামায়াত আমিরের

প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । আজকের খবর অনলাইন

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্মারক দিবস হিসেবে ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করার সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে নানা মতবিরোধ ও রাজনৈতিক বিতর্ক। সরকারিভাবে দিনটি উদযাপন উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর একদিকে যেমন কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, অন্যদিকে এর বিরোধিতায়ও মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিভিন্ন পক্ষ। সবচেয়ে আলোচিত প্রতিক্রিয়াটি এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের কাছ থেকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুক্রবার (২৭ জুন) দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ডা. শফিকুর রহমান সরাসরি জানিয়েছেন, ৮ আগস্ট নয়, বরং ৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। তার মতে, এই দিনেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। কারণ, গত বছরের এই দিনেই ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।

তার ভাষায়, “নতুন বাংলাদেশ গঠনের সূচনা যেদিন হয়, সেই দিনটিই হওয়া উচিত আমাদের জাতির নতুন অভিযাত্রার প্রতীক। ৫ আগস্ট ছিল একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ—শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা আসে এই দিনেই। তাই এটিকে উপেক্ষা করে ৮ আগস্টকে বেছে নেওয়া ইতিহাস বিকৃতির শামিল।”

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ৮ আগস্টের তাৎপর্য আলাদা। কারণ এই দিন থেকেই বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক রূপরেখার দিকেই এগিয়ে যেতে শুরু করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আশায়। সেই বিবেচনায় দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে।

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও। রাজনৈতিক তরুণদের সম্মিলিত আন্দোলন থেকে আত্মপ্রকাশ করা এই দলটি মনে করে, তারা আওয়ামী লীগের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, কিন্তু সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী রাজনৈতিক প্রতীক চিহ্নিতকরণে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার ৮ আগস্টকে মনোনীত করায় তারা হতাশ হয়েছেন। তাদের দাবি, মূল বিজয়ের দিনকে উপেক্ষা করে কার্যকরী পরবর্তী দিনটিকে প্রতীকীকরণ করা ঠিক হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের এই পর্বে দিবস নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ঐক্য ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ করতে পারে। বিশেষ করে যদি এই বিতর্ক দলীয় বিভাজনের দিকে গড়ায়, তবে তা জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ব্যাহত করতে পারে।

তবে সরকারি মহল থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ কোন দল বা গোষ্ঠীর নয়, এটি একটি জাতীয় প্রতীক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বিবেচনায় সরকার ৮ আগস্টকে নির্বাচন করেছে, যেহেতু এই দিনই অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেয় এবং জাতিকে একটি নতুন পথে পরিচালনার ঘোষণা দেয়।’

এর মধ্যেই নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘিরে নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা চলছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে সেমিনার, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে দিনটি নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজনও ক্রমেই গভীর হতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে, ‘নতুন বাংলাদেশ’ কেবল একটি রাজনৈতিক শব্দ নয়, এটি একটি চেতনা ও প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ, যার ব্যাখ্যা এবং প্রতীকীকরণ এখনো অনেকটাই রাজনীতির কাঁটাতারে বন্দি। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও রাজনৈতিক মহল সম্মিলিতভাবে কীভাবে এই প্রতীকী দিবসটিকে একটি সর্বজনীন স্বীকৃতি ও গৌরবের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫