প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
ক্রিকেট এমন এক খেলা যেখানে রেকর্ড সৃষ্টি হওয়া যেন প্রতিদিনের চিত্র। কেউ কেউ রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে, কেউ কেউ আবার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে যুক্ত হয়ে পড়েন সমালোচনার মুখে। তেমনি এক বিব্রতকর ও লজ্জাজনক রেকর্ডে এবার নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটার এনামুল হক বিজয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার যেন ঠিক তার বিপরীত ছবি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার সুযোগ পেয়েও নিজেকে প্রমাণ করতে পারছেন না বিজয়। তাঁর পারফরম্যান্সে নেই আত্মবিশ্বাস কিংবা দৃঢ়তা। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে যেন বের হতেও পারছেন না।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ শ্রীলঙ্কা সফর। বাংলাদেশ দল এই সফরে সামগ্রিকভাবে ভালো খেললেও এনামুল হক বিজয় ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। টেস্ট সিরিজে টানা তিন ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি, যার মধ্যে দু’বার ‘ডাক’ মেরেছেন। এই ব্যর্থতা শুধু সফরটাই নয়, বিজয়ের পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
আর এই ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় তিনি গড়েছেন এমন এক রেকর্ড, যা টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে খুব কম ক্রিকেটারেরই আছে। ইতিহাসের সব টপ অর্ডার ব্যাটারের মধ্যে যারা অন্তত ১৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন, তাদের মধ্যে এনামুল হকের ব্যাটিং গড় এখন সর্বনিম্ন—মাত্র ১১.০০। এ পরিসংখ্যান শুধু হতাশাজনক নয়, বরং উদ্বেগজনক। তাঁর ব্যাটিং গড় এতটাই নিচে যে, তা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বিজয়ের টেস্ট ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। তিনি এখন পর্যন্ত ৮টি টেস্ট ম্যাচে ব্যাট করেছেন ১৪ ইনিংসে। এই ১৪ ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর মাত্র ৩৯। কোনো ফিফটি বা সেঞ্চুরি নেই। তিনবার ‘ডাক’ মেরেছেন। সব মিলিয়ে করেছেন মোটে ১৪৩ রান।
এখানেই শেষ নয়। বিজয় বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে আরও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। তিনি এখন সেই ব্যাটার, যিনি অন্তত ৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এবং বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে গড়ের মালিক। এই রেকর্ডে তিনি পেছনে ফেলেছেন মেহরাব হোসেন অপিকে, যাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১৩.৩৯।
এই পরিস্থিতিতে এনামুল হকের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বারবার সুযোগ পেয়েও তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারায় নির্বাচকদের আস্থা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, নতুন মুখ উঠে আসছে, যারা জায়গা পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। বিজয়ের জন্য এটা স্পষ্ট সতর্কবার্তা।
ক্রিকেটে ব্যর্থতা কারও স্থায়ী নয়, আবার সফলতাও স্থায়ী নয়। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ধারাবাহিক ব্যর্থতা কেবল একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারকেই বিপন্ন করে না, গোটা দলের ভারসাম্যকেও নড়বড়ে করে দেয়। এনামুল হক বিজয়ের এই রেকর্ড তাই শুধুই পরিসংখ্যান নয়—এটি তার প্রতি আস্থার ভরসা হারানোর একটি প্রতিচ্ছবি।
এখন দেখার বিষয়, এই ধাক্কা কাটিয়ে বিজয় কীভাবে নিজেকে ফিরে পান। ফিরে আসার পথ এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ইনিংস এখন তার জন্য পরীক্ষা, প্রতিটি সুযোগ একটি সম্ভাব্য শেষ সুযোগ। এজন্য দরকার আত্মবিশ্বাস, টেকনিক্যাল উন্নতি এবং সবচেয়ে বেশি দরকার মানসিক দৃঢ়তা—যা তাকে পুনরায় ‘বিজয়’ বানাতে পারে।