প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাই

চার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

ড. ইউনূসের সফর ছিল বহুমাত্রিক গুরুত্ববাহী। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার কাছ থেকে সম্মানজনক ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ করা। তবে এই সফর কেবলমাত্র সম্মাননা গ্রহণেই সীমাবদ্ধ ছিল না। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নানা মহলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

৯ জুন ঢাকা ত্যাগ করে ১০ জুন সকালে লন্ডন পৌঁছান ড. ইউনূস। সফরের শুরুতেই তিনি কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বিমান খাতের উন্নয়ন ও লাভজনক অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে তিনি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ‘চ্যাথাম হাউজ’-এ আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বক্তব্যও রাখেন, যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে তার চিন্তাধারা তুলে ধরেন।

১৩ জুন শুক্রবার তার সফরের চূড়ান্ত দিনটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে তিনি রাজা চার্লসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন এবং একইদিন বিকালে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি হাউস অব কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েলের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে সংসদীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সফরের শেষ দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, সেখানে আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ও রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়ে দু’পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছায়।

এই সফরে তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য প্রস্তাবিত জরিপ ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক জাহাজ এইচএমএস এন্টারপ্রাইজ সম্পর্কে অবহিত করেন।

সফরের এক পর্যায়ে তিনি লন্ডনে অবস্থানকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে অংশ নেন, যেখানে তরুণদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে উৎসাহ দেন।

অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর শুধু একটি রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কৌশলগত সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সংলাপের ক্ষেত্রেও এক নতুন মাত্রা যুক্ত হলো বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।