শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড়

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
  • ৩১ বার

প্রকাশ: ১৩ই জুন, ২০২৫ • আজকের খবর ডেস্ক • আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কল্পনাজাল এবার কিছুটা বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠক ঘিরে দেশ-বিদেশে সাড়া পড়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ইঙ্গিত মিলেছে বিভিন্ন সূত্রে। যদিও সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে এই আলোচনাকে ঘিরে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা উঠে এসেছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূমিকা এবং তার প্রভাব বিস্তার নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই বৈঠককে একটি বড় কূটনৈতিক ঘটনার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করছে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষক বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রভাবশালী অবস্থান এক ধরনের ‘মৌন আধিপত্যবাদ’ সৃষ্টি করেছে, যা বহুমাত্রিক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, একটি প্রগতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্র—যার নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি—বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো উপলব্ধি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে বলেও ইঙ্গিত এসেছে কূটনৈতিক মহল থেকে।

ইরানে সাম্প্রতিক হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্বে যে সহানুভূতি ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তার ছায়া এই বৈঠকের আলোচনার প্রেক্ষাপটেও প্রতিফলিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের একাংশ বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের দ্বান্দ্বিকতাকে তুলনা করছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতির সঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতকে প্রতিহত করতে আঞ্চলিক মুসলিম শক্তির সাথে একটি বৃহৎ ঐক্যের ধারণাও উঠে আসছে, যা শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং নীতিগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের সার্বভৌম অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের এই বৈঠক শুধু রাজনৈতিক দূরত্ব কমানোর প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ কৌশলগত সমঝোতার সূচনাও হতে পারে। বর্তমান সরকার ও বিএনপির মধ্যে অতীতের মতানৈক্য ও আন্তর্জাতিক প্রভাবমুক্ত একটি কৌশলগত ঐক্য গড়ে উঠতে পারে কিনা, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ তুঙ্গে। তবে এটাও সত্য যে বিএনপির অভ্যন্তরে এখনও এমন একটি গোষ্ঠী সক্রিয়, যারা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী এবং এ ধরনের নতুন আঞ্চলিক সমীকরণে তারা নিজেদের অবস্থান গেইন করতে চাইবে।

এই অবস্থায় জাতীয় পর্যায়ে একটি বৃহত্তর সংহতি ও ঐকমত্য অপরিহার্য। কারণ ইতিহাস সাক্ষী, যখনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো অভ্যন্তরীণ ঐক্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, তখনই ভারত কৌশলগত চাল দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। অতীতের উদাহরণ যেমন ইসকন ইস্যু কিংবা সীমান্ত চুক্তির দ্ব্যর্থতা, এ কথারই প্রমাণ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন সময় এসেছে গভীর সংবেদনশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে ভবিষ্যতের পথনকশা নির্ধারণের।

বিশ্ব রাজনীতির চলমান উত্তেজনা ও আঞ্চলিক জটিলতা যখন বাংলাদেশকে আরও বেশি করে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করছে, তখন ভারতীয় আধিপত্যবাদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ঐক্য গড়ে ওঠে, ততটাই মঙ্গলজনক। আন্তর্জাতিক কূটনীতির এই মুহূর্তে যারা বাংলাদেশের পক্ষ নিতে প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে এবং একইসাথে দেশের ভেতরে যারা বহিরাগত স্বার্থে কাজ করছে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে শক্ত হাতে।

এই বৈঠক একটি বার্তা বহন করে—বাংলাদেশ কোনো গোষ্ঠীর করুণা বা নির্ভরতার উপর নয়, বরং নিজের সার্বভৌমতায় বিশ্বাসী একটি রাষ্ট্র হিসেবে তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে চায়। তাই ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য ও সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সেই সম্পর্ক যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব, নিরাপত্তা হুমকি বা অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণ না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ আর কারো ছায়াতলে নয়—এই আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার পথেই এগিয়ে যেতে হবে জাতিকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫