প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বহুল প্রতীক্ষিত এবং তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে লন্ডনে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার এই আলোচনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি সম্ভাবনাময় মোড় বা ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন, যা দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারে।
বৃহস্পতিবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এবং বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়, লন্ডনের পার্ক লেন এলাকার হোটেল ডোরচেস্টারে এই আলোচিত বৈঠকটি শুরু হয়। তারেক রহমান ওই দিন বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে নিজ বাসা থেকে রওনা হয়ে হোটেল ডোরচেস্টারে পৌঁছান। তার সফরসঙ্গী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এ বৈঠকের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ছবিতেও দেখা যায়, ড. ইউনূস ও তারেক রহমান একই টেবিলে বসে আলোচনায় লিপ্ত। ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে বৈঠকটিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিএনপির ভাষ্যমতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতার হস্তান্তর নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে, তা নিরসনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈঠক শুরু হওয়ার কিছু সময় আগে থেকেই হোটেল ডোরচেস্টারের বাইরে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি-সমর্থিত প্রবাসী নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকের হাতেই ছিল ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার, যেখানে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন বার্তা ছিল লেখা। জনসমাগম ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে লন্ডন পুলিশ হোটেল চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সংঘাতের দেয়াল ভাঙার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক সমঝোতার পথ তৈরি হলে, তা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই আলোচনা দেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।” তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বিএনপি এই বৈঠককে শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে নয়, বরং ফলপ্রসূ রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা হিসেবে দেখছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে, যেখানে নির্বাচন ঘিরে রয়েছে নানা সংশয় এবং জনগণের মনে তৈরি হয়েছে একধরনের অনিশ্চয়তা, সেখানে এই ধরনের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনেককেই আশার আলো দেখাচ্ছে। দেশের নাগরিক সমাজ, কূটনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও এই আলোচনার ফলাফলের দিকে গভীর আগ্রহ ও মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আলোচনা সফল হয় এবং পরবর্তীতে তা থেকে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়কাল, তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের গঠন ও দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা—এই বিষয়গুলো নিয়ে যদি সুস্পষ্ট সমঝোতা গড়ে ওঠে, তাহলে তা দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
এই মুহূর্তে আলোচনার আনুষ্ঠানিক বিবরণ বা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা না হলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সারবত্তা ও সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে এবং উভয় পক্ষই একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, এই বৈঠক শুধু একটি আলোচনার ধাপ নয়—বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনের সূচনা। যেখানে মতপার্থক্য সত্ত্বেও আলোচনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। এবং এই পথেই হয়তো ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।