প্রকাশ: ১০ ই জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক 

সরকার পরিবর্তনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের তদন্তের আওতায় এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও অন্যান্য সামরিক শাখার সাবেক ১০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ গ্রহণ এবং বিদেশে অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের গোয়েন্দা শাখা ও আর্থিক খাত বিশ্লেষকদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব কর্মকর্তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতাধিক কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের একটি বিশেষ কমিটি তার সম্পদ ও আর্থিক লেনদেন তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে বলে জানা গেছে।

একইভাবে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপচয়, ঘুষ গ্রহণ এবং অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব ও ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়েছে। সাবেক এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধে চাকরিকালীন সময়ে ঘুষ নেওয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদ দখল এবং লন্ডনে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার ও তার স্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজীকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জমি দখল ও অবৈধ পার্ক নির্মাণের অভিযোগে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত।

সাবেক ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আদালত তাদের বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ করেছেন। সাবেক এসএসএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্ত্রীসহ অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তার দুটি বাড়ি, ১০টি প্লট ও ১৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এমপি ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে দুদক দুটি মামলা করেছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামরিক বাহিনীর সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় এই অভিযান দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।