শিরোনাম :
ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯০ জন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো ইরান, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা নয় হজযাত্রী নিয়ে ভারতে উড়োজাহাজের চাকার সমস্যা, বের হলো ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাথে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ট্রাইব্যুনালে হাজিরি দেন সাবেক আইজিপি মামুন ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়?

আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে পুশইন: দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২০ বাংলাদেশিকে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
  • ২৫ বার

প্রকাশ: ১০ ই জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আবারও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও কূটনৈতিক প্রটোকলের লঙ্ঘন ঘটিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশইন’ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) ভোররাতে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের পৃথক দুটি সীমান্ত দিয়ে অন্তত ২০ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে এবং বিষয়টি নিশ্চিত করে বলে জানা যায়।

বিজিবির দিনাজপুর ব্যাটালিয়নের (৪২ বিজিবি) অধীনে এনায়েতপুর বিওপির কোম্পানি কমান্ডার ঠান্ডু মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার এনায়েতপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি থানার মোল্লাপাড়া সীমান্ত গেট দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করা হয় ১৩ জনকে। তাদের মধ্যে ২ জন নারী, ২ জন পুরুষ এবং ৯ জন শিশু রয়েছে। তাদের সবাইকে আটক করে বিজিবি নিজেদের হেফাজতে রেখেছে এবং যাচাই-বাছাই করছে তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নাগরিক কি না।

এছাড়া একই ব্যাটালিয়নের অধীনে থাকা ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ আরও ৭ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায়। ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আসা এই ব্যক্তিদের মধ্যেও শিশুরা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল-মইন হাসান। তিনি বলেন, “এই ধরনের কার্যক্রম শুধু মানবাধিকারের পরিপন্থীই নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”

এই পুশইনের ঘটনায় স্থানীয় জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ ধরনের আচরণ এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে অভাবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ ভারতের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করলে পরে তাদের বিনা প্রক্রিয়ায়, আইনি যাচাই ছাড়াই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, অনেক সময় কোনো ধরনের কূটনৈতিক যোগাযোগ ছাড়াও।

এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে পুশইন বা পুশব্যাক করার ক্ষেত্রে তাকে প্রথমে আটক করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনানুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়। অথচ এখানে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই বিএসএফ সরাসরি বাংলাদেশে পুশইন করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত চুক্তির পরিপন্থী।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং বিজিবি কর্মকর্তারা।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে এমন ঘটনায় শুধু মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয় না, তা দুই দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সৌহার্দ্যেও গভীর চিড় ধরাতে পারে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি অনুসারে, সীমান্তে আটক বা সন্দেহভাজন নাগরিকদের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ কেবল উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে এবং সীমান্তে বসবাসরত জনগণের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।

অন্যদিকে, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের অস্থায়ীভাবে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি প্রমাণ হয় তারা বাংলাদেশি নাগরিক, তাহলে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায়, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হবে।

এই ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজ সংগঠন। তাদের মতে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ প্রতিবাদ জানানো, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আর না ঘটে।

বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি। টহল বৃদ্ধি ও স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, কেবল সীমান্তে বাহিনী মোতায়েনই নয়, প্রয়োজন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিক রাজনৈতিক উদ্যোগ—যা এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫