শিরোনাম :
ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় ইসরায়েল: প্রতিবেদন তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

তারেক রহমান বনাম বিএনপি: অভ্যন্তরীণ বিভাজনে নেতৃত্ব সংকটে দল

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
  • ৪০ বার

প্রকাশ: ০৭ই জুন ২০২৫ । আজকের খবর অনলাইন । নিজস্ব সংবাদদাতা

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্তমান বাস্তবতায় একটি গভীর প্রশ্ন উঠে এসেছে—দলটির কার্যত নেতা কে? দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত তারেক রহমান এখন কীভাবে দলের কার্যক্রমে প্রভাব রাখছেন, কিংবা আদৌ রাখছেন কি না, তা নিয়ে দলে-দলের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো সাম্প্রতিক এক পোস্ট থেকে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়া এই ইস্যু ঘনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দলের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা অনেকটাই তারেক রহমানবিরোধী অবস্থানে মোড় নিয়েছে। নামমাত্র নেতৃত্বে থাকলেও, মাঠপর্যায়ে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ এখন মূলত এক ভিন্ন বলয়ের হাতে। এই বলয়টি গঠিত হয়েছে মূলত ভারতের প্রতি নমনীয়তা ও ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সুবিধাজনক সম্পর্ক বজায় রাখা নেতাদের দ্বারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান ও দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দূরত্বকে পুঁজি করে ভারত বেশ সুচারুভাবে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির ঐতিহ্যগত অবস্থান থেকেও সরে এসেছে এই নেতৃত্বগোষ্ঠী। দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কৌশল নির্ধারণে এখন মুখ্য হয়ে উঠেছেন সালাহউদ্দীন আহমেদ, যিনি একসময় গোপনীয়তা ও প্রশিক্ষণে প্রখ্যাত ছিলেন। বহু পর্যবেক্ষকের মতে, তাকেই ভারত ঘনিষ্ঠ একটি প্রভাবশালী বলয়ের মূল সমন্বয়কারী হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মো. আব্বাস উদ্দিন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, শ্যামা ওবায়েদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী ও দুদু-ভুলুর মতো বহু পুরনো নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, এদের অনেকেই ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, হানিট্র্যাপ ও সরকারপ্রণীত দুর্বলীকরণ কৌশলের ফাঁদে আটকে পড়েছেন। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আপত্তি ও বিরোধিতার মাধ্যমে তারা এখন মাঠের বিএনপিকে কার্যত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

এই বাস্তবতায়, বিএনপির অতীত, বর্তমানে এক বিরাট ফারাক তৈরি হয়েছে। দলটির আদর্শিক ভিত্তি যেভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সময় গড়ে উঠেছিল, আজকের বাস্তবতায় তার প্রতিফলন মিলছে না। তারেক রহমান দল ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, সেই চিন্তার বাস্তব রূপ নেই মাঠপর্যায়ে। এ কারণে বিএনপি এখন অনেক পর্যবেক্ষকের চোখে “আওয়ামী লীগের বি-টিমে” পরিণত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইতিহাসে এমন সংকট আগেও এসেছে। ১৯৮২ সালে এরশাদের শাসনামলে বিএনপির বহু প্রভাবশালী নেতা দলত্যাগ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তৎকালীন বিএনপির শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন খালেদা জিয়া, যিনি প্রখর রাজনৈতিক মেধা ও অদম্য সাহসিকতা দিয়ে দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ১৯৯১ সালে সফলভাবে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। অনেকের মতে, সেই দৃঢ়তা ও নেতৃত্ব গুণের অভাবই এখন তারেক রহমানের বিএনপিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ভারতের প্রভাববিস্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই এখন বিএনপির সামনে একটি বড় কৌশলগত চাল হতে পারে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদ ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রবল বিরূপ মনোভাব রয়েছে। ভারতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি যদি নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে এবং জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধে দৃঢ় থাকে, তাহলে তা দলটিকে আবারও একটি শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপির অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর সংস্কার। তারেক রহমানকে এই সংস্কারের নেতৃত্বে আসতে হবে। দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা বিভীষণদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, দলের প্রতি নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও গণমানুষের গ্রহণযোগ্য নেতাদের দিয়ে বিএনপিকে পুনর্গঠন করা এখন সময়ের দাবি।

দলের নেতৃত্ব সুসংহত না হলে, ভবিষ্যতে তারেক রহমানের দলীয় অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং প্রবাসই হয়ে উঠবে তাঁর একমাত্র রাজনৈতিক অবস্থান। সুতরাং, এই মুহূর্তে তাঁর সামনে আছে একটি কঠিন কিন্তু অনিবার্য দায়িত্ব—দলটিকে নতুন করে সংগঠিত ও দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া।

শেষ কথা হলো, বিএনপি যদি নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ, নেতৃত্বের সঠিকতা এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় ফিরতে পারে, তাহলে দলটি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আর যদি এই সুযোগও হাতছাড়া হয়, তাহলে বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা করাই হয়ে উঠবে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫