প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

বলিউডে তারকাদের ঘিরে নানা সময়েই নানাবিধ চাঞ্চল্যকর গুঞ্জন শোনা যায়। কখনও সেগুলোর ভিত্তি থাকে বাস্তবতার উপর, আবার কখনও তা হয় কল্পনার রঙ মেশানো নিছকই গুজব। এমনই একটি বহু পুরনো এবং বিতর্কিত রটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান। সম্প্রতি একটি পুরনো সংবাদ প্রতিবেদন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে তার কৈশোরকালীন জীবনের এক গুঞ্জন—মাত্র ১৪ বছর বয়সে নাকি তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন।

এই দাবি করা হয় ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমে, যার মধ্যে টিভি নাইনের একটি পুরনো প্রতিবেদন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কারিনার জীবনে ঘটে এমন এক ঘটনা, যা সে সময় বলিউড অঙ্গনে অস্বস্তি তৈরি করেছিল। যদিও ওই সময় ঘটনাটি গণমাধ্যমে বড় করে আসেনি, বরং বলিউড পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে, এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেটি থেকে যায় আলোচনার ছায়ার আড়ালে।

কারিনা কাপুর, যাকে অনেকে “বলিউডের বেবো” নামে চেনেন, ১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মুম্বাইয়ের কাপুর পরিবারে। বাবা রণধীর কাপুর এবং মা ববিতার পারিবারিক জীবনে ছিল টানাপোড়েন। কাপুর পরিবারের রীতিনীতির কারণে বিবাহিত নারীদের অভিনয়ে অংশ নেওয়াকে অপছন্দ করা হতো, যা মেনে নিতে পারেননি ববিতা। ফলে দুই কন্যা—কারিনা ও কারিশমাকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকতেন।

প্রথমে যমুনাবাই নার্সিং স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তীতে কারিনাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেরাদুনের বিখ্যাত বোর্ডিং স্কুল, ওয়েলহাম গার্লস স্কুলে। বলা হয়ে থাকে, সেখানে থাকাকালীন বয়স যখন ১৪, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ঘটনাটি এতটাই রহস্যজনক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের ছিল যে, কোনোরকম সরকারি নথি বা প্রত্যক্ষ প্রমাণ কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

সন্তানের সম্ভাব্য পিতা হিসেবে যিনি উঠে এসেছেন আলোচনায়, তিনি আর কেউ নন—বলিউড অভিনেতা হৃতিক রোশন। যদিও হৃতিক ও কারিনার সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে বরাবরই কানাঘুষো চলত, তবে এই ধরনের ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা কেউই কখনো প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—এই ঘটনার কতটা সত্যতা রয়েছে? সাংবাদিকতা ও তথ্য যাচাইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সরকারি নথি, সাক্ষাৎকার, বা বিশ্বাসযোগ্য উৎসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি যা এই অভিযোগ বা রটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। কারিনা নিজেও কখনো এ নিয়ে মন্তব্য করেননি, বরং নিজের ব্যক্তিজীবনকে সবসময়ই যথাসম্ভব গোপন রেখেছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, কারিনা কাপুর বলিউডে তার অভিনয় প্রতিভা এবং স্টারডম দিয়েই বরাবর নজর কাড়েন। ‘রিফিউজি’ দিয়ে তার বলিউডে অভিষেক এবং পরবর্তী সময়ে ‘জব উই মেট’, ‘ওমকারা’, ‘তালাশ’, ‘চামেলি’, ‘উড়তা পাঞ্জাব’সহ একাধিক সিনেমায় তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—১৪ বছর বয়সে কারিনা কাপুরের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি কি সত্যিই কোনো ঘটনা ছিল, নাকি শুধুই এক তীক্ষ্ণ রটনা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ নিয়েছে এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী পৌরাণিক কাহিনির মতো? নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন, কারণ প্রমাণ নেই, মন্তব্য নেই, বরং আছে সময়ের গা-ছমছমে একটি ধোঁয়াটে গল্প।

এমন বিতর্কিত এবং অপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনার মুখে পড়া তারকার জীবনের প্রকৃত সত্য কতটা আলাদা, তা বোঝা যায় তার পরবর্তী পথচলার মাধ্যমেই। আর কারিনার ক্ষেত্রে সেটি নিঃসন্দেহে বলিউডের এক উজ্জ্বল ও সফল অধ্যায়, যা তাকে শুধুই ‘রটনার নায়িকা’ নয়, বরং একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হিসেবেই ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে।