প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
ঢাকাই চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে সক্রিয় থেকে বহু সুপারহিট সিনেমা উপহার দেওয়ার সুবাদে তিনি গড়েছেন এক বিশাল ভক্তবলয়। দেশে-বিদেশে তার নাম ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ব্যক্তিত্বপ্রতিম অবস্থান। এই অবস্থান থেকেই তাকে বহু সময় ‘কিং খান’, ‘সুপারস্টার’, ‘নবাব’ বা সাম্প্রতিককালে ‘মেগাস্টার’ উপাধিতে অভিহিত করা হচ্ছে। কিন্তু এই ‘মেগাস্টার’ অভিধা নিয়ে সরব হয়েছেন আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা—জাহিদ হাসান।
চলতি ঈদুল আজহায় একদিকে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’, অন্যদিকে মুক্তি পেয়েছে জাহিদ হাসানের ‘উৎসব’। ঈদের প্রথম সপ্তাহে শাকিব খানের সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে অগ্রাধিকার পেলেও, সময়ের ব্যবধানে দর্শকদের সাড়া ও প্রদর্শনী সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে গেছে জাহিদ হাসানের উৎসব। চতুর্থ সপ্তাহে এসে উৎসব-এর প্রদর্শনী সংখ্যা বেড়েছে, যখন ‘তাণ্ডব’ অনেক প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই বাস্তবতায়, ‘মেগাস্টার’ উপাধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাহিদ হাসান। তার ভাষায়, “আমাদের এখানে তাণ্ডব সিনেমাকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ এতে শাকিব খান আছেন। তাকে শুধু শাকিব বলা হয় না, বলা হয় মেগাস্টার শাকিব খান। অথচ অন্যদের বলা হয় শুধু ‘চিত্রনায়ক’। এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি তো একজন অভিনেতা, যিনি অন্যদের মতোই অভিনয় করছেন। নামের আগে এমন বিশেষণ ব্যবহার কতটা যুক্তিসংগত—সেটি সময় বলে দেবে। তবে এই শব্দটা কানে লাগে।”
জাহিদ হাসানের বক্তব্য শুধু একটি বিশেষণকে ঘিরে নয়—বরং এর পেছনের শিল্প-সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা এবং প্রভাব সম্পর্কেও ইঙ্গিতবাহী। তিনি মনে করেন, একটি সিনেমার সাফল্য কেবল তার অভিনেতার পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে না; বরং তার কাহিনি, নির্মাণশৈলী এবং দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগই প্রকৃত বিচার্য। “শেক্সপিয়ারের একটা কথা আছে,” বলেন জাহিদ হাসান, “কোনো কিছু হওয়া বড় বিষয় না, হয়ে থাকাটা বড় বিষয়। আমি বলছি, এতগুলো হল পেয়েছি—কিন্তু পরে সেগুলো থাকছে না। এটা তো এক ধরনের অপমান। বিনয়ের সঙ্গে এগিয়ে গেলে শিল্প টেকে।”
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, ঈদ মৌসুমে প্রেক্ষাগৃহে বড় পরিসরে মুক্তি পায় মূলত শাকিব খানের সিনেমা। অন্য শিল্পীদের সিনেমা অনেক সময় চাপা পড়ে যায় বাজারে প্রচার ও বিতরণ ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতায়। তবে এবারের ঈদে সেই চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিল। ‘উৎসব’-এর মতো সিনেমা দর্শকদের মাঝে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে, যেখানে গল্প ও অভিনয়শৈলীর সমন্বয় গুরুত্ব পেয়েছে—নির্দিষ্ট কোনো তারকার মোড়ক নয়।
জাহিদ হাসানের স্পষ্ট মত, ঈদের সিনেমা কারও একার নয়। এটি শিল্পের, এটি দর্শকের। “আমার প্রত্যাশা সব সিনেমাই ভালো করুক। প্রত্যেকেই যেন তার জায়গা থেকে শিল্পচর্চা করতে পারে, সম্মান পায়।” এমন বক্তব্যে বোঝা যায়, তার আপত্তি ব্যক্তি শাকিব খানের বিপক্ষে নয়, বরং তার নামে ব্যবহৃত বিশেষণ নিয়ে তৈরি একরৈখিক সাংস্কৃতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে।
এই বিতর্কে শাকিব খানের পক্ষে বা বিপক্ষে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে: একজন অভিনেতার নামের আগে ‘মেগাস্টার’ শব্দ জুড়ে দেওয়া কি প্রকৃত শিল্পচর্চাকে অনুপ্রাণিত করে, নাকি প্রভাব ফেলে বিচার ও গ্রহণযোগ্যতার ভারসাম্যে? উত্তরের দায় যেমন মিডিয়া এবং ভক্তদের, তেমনি সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রির প্রতিটি স্তরের।
শুধু আলোচিত বা জনপ্রিয় হলেই কেউ শিল্পের শ্রেষ্ঠ পরিচয় অর্জন করে না—এমন মৃদু অথচ অর্থপূর্ণ বার্তাই হয়তো দিতে চাইলেন এই সময়ের এক শৈল্পিক অভিনেতা, জাহিদ হাসান।