শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

সেনা–প্রযুক্তি ক্যাম্পাসে ভারতীয় উপস্থিতি নিয়ে নতুন বিতর্ক—স্বাধিকার, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা শঙ্কা কতটুকু?

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • ২৬৩ বার

প্রকাশ: ২৬শে জুন ২০২৫ | মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ষোলো বছরের শাসনকালজুড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘‘অস্বাভাবিক প্রভাব’’—রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনী পর্যন্ত—নিয়মিত আলোচনার বিষয় ছিল। জাতীয় নির্বাচন স্থগিত হওয়া, পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং সাম্প্রতিক কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদনে সেই অভিযোগ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। এসব প্রতিবেদনের দাবি, শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরেও দিল্লির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব শক্ত ঘাঁটি গেড়েছিল — এমনকি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই–এর সদর দপ্তরে নাকি গোপন ‘ওয়ার্ক স্টেশন’ গড়ে তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি প্রতিরক্ষা–বিষয়ক পোর্টালের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার বা অস্বীকার—কোনোটাই করা হয়নি ।

এই প্রভাব–বিতর্ক নতুন মাত্রা পায় যখন দেখা যায় সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত সামরিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (এমআইএসটি)–তে একাধিক ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা এখনো পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ‘সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ হিসেবে রয়েছেন কর্নেল অরিন্দম চ্যাটার্জি এবং ‘ইনস্ট্রাক্টর ক্লাস–বি’ হিসেবে আছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার টি. গোপি কৃষ্ণ। অন্যদিকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ‘ফরেন ফ্যাকাল্টি’ খেতাব নিয়ে কর্মরত গ্রুপ ক্যাপ্টেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর পাটনায়েক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. এন. সোমান্না—দুজনেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা।

অ্যাকাডেমিক বিনিময় কর্মসূচি বাংলাদেশের সামরিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একেবারে নতুন বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ২০০২ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও প্রশিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা এখানে এসে পাঠদান করেছেন। এতে করে শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জনের একটি পথ খোলা ছিল।

তবে বিষয়টি শুধুমাত্র ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’ হিসেবে দেখলেই কি যথেষ্ট? এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো—এই বিনিময় কর্মসূচির অংশীদার কে বা কারা? বাংলাদেশ যদি কোনো দেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই সম্ভাব্য দেশের তালিকায় এক নম্বরে থাকবে ভারত। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইতিহাস ও বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়—ভারত ব্যতীত বাংলাদেশকে আক্রমণ করার মত অবস্থানে অন্য কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেই। সেই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন সরাসরি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীন পরিচালিত একটি উচ্চতর সামরিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন, তখন সেটি নিঃসন্দেহে শুধু কূটনৈতিক নয়, নিরাপত্তাজনিত প্রশ্নও তোলে।

উল্লেখযোগ্য যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক চিরকালই জটিল ও বহুস্তরীয়। সীমান্ত হত্যা, তিস্তাসহ পানি চুক্তির স্থবিরতা, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর বাংলাদেশি রাজনীতিতে বারবার হস্তক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহে ‘অদৃশ্য প্রভাব’ এই সম্পর্ককে করে তুলেছে আরও উদ্বেগজনক। এসব ঘটনার আলোকে এমআইএসটি–র মতো স্পর্শকাতর একটি সেনা–প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একইসাথে চারজন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তার নিয়োগ শুধু একাডেমিক বিনিময় নয়, বরং রাষ্ট্রীয় কৌশলগত প্রশ্নে উদ্বেগ ও আস্থাহীনতা তৈরি করে।

এই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম. আলম একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন: “যাঁরা পড়াচ্ছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত পেশাদারিত্ব হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ নয়; তবে প্রশ্ন হলো আমাদের দেশের সার্বভৌম নিরাপত্তা নিয়ে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার আড়ালে আমাদের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত সামরিক তথ্য ভারতের কাছে যেভাবে সহজে পৌঁছাতে পারে, তা নীতি-নির্ধারকেরা কি একবারও চিন্তা করেছেন?”

এই প্রশ্নটি নিছক কোনো কল্পনা নয়, বরং একটি বাস্তব উদ্বেগ। যুদ্ধক্ষেত্র এখন আর কেবল গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ নেই—তথ্য, প্রযুক্তি এবং কৌশলগত পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই আধুনিক লড়াই পরিচালিত হয়। এমতাবস্থায় সামরিক প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সেনা কর্মকর্তাদের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি শুধু একাডেমিক বা কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, তা এক অর্থে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা হুমকির জন্য একটি অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশদ্বার।

এখন সময় এসেছে খোলামেলা ও সাহসী আলোচনা করার—আন্তর্জাতিক বিনিময় আর তথ্য সুরক্ষার ভারসাম্য কোথায় থাকবে? আমাদের উচ্চশিক্ষা কি এতটাই উন্মুক্ত হওয়া উচিত যে, সে সুযোগে কৌশলগত শত্রুও প্রবেশাধিকার পেয়ে যায়? নাকি সময় এসেছে এই ধরনের বিনিময় নীতিকে আরও সুসংহত ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার? সিদ্ধান্ত যাই হোক, প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করার সময় আর নেই।

ঢাকা সেনানিবাসে সাম্প্রতিক ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের এমআইএসটিতে নিযুক্ত থাকার ঘটনাটি এখন এক দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গোটা সামরিক প্রশাসনে এটি যেমন ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, তেমনি উদ্বেগের ঝড় তুলেছে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাঝেও। সাম্প্রতিক কিছু সংবাদ সম্মেলন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অত্যন্ত সরল ও দৃঢ় ভাষায় বলেছেন যে, “সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই লক্ষ্যে কাজ করছে” এবং “জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস কিংবা নমনীয়তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এই বক্তব্যে বাহিনীর পেশাদার অবস্থান ও নিরপেক্ষতা প্রকাশ পেলেও, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অতীত কার্যক্রম ঘেঁটে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। রাজনৈতিক অস্থিরতা, শাসনব্যবস্থার অপচালনা এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার সময় বারবার সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিগত এক দশকজুড়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড বারবার জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

মজার এবং একইসঙ্গে দুঃখজনক এক বাস্তবতা হলো, গত পনেরো বছরে অনেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বিনা খরচে ভারতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ আবার পদোন্নতির আশায় দিল্লির সেনা সদর দফতরে গিয়ে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নামে নিজেদের অবস্থান পাকা করার চেষ্টাও করেছেন। এই দৃশ্যপট দেখে কখনও কখনও মনে হয়েছে যেন বাংলাদেশ নিজেই ভারতের এক প্রকার করদ রাজ্যে পরিণত হয়েছে, আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেন ভারতীয় সেনাবাহিনীরই একটি পরোক্ষ উপশাখা মাত্র।

এই অবস্থাকে আরও উন্মোচিত করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়কার বিতর্কিত মন্তব্য, যেটি জাতির মনে আজও প্রশ্নের উদ্রেক করে। তিনি একবার গর্ব করে বলেছিলেন, “আমি ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।” যেন দেশের জনগণ নয়, বরং ভারতই ছিল তাঁর শাসনক্ষমতার আসল মালিক, আর তিনি নিজেকে সেই ক্ষমতার অভিভাবক মনে করে পিতৃসম্পত্তির মতো দেশের স্বার্থ বিলিয়ে দিয়েছেন বিদেশি মিত্রদের হাতে।

আরেক অবাক করা দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কথায়। একবার তিনি প্রকাশ্যে বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো। ভারতের উন্নতি মানেই আমাদের উন্নতি।” শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, “আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।” একজন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এমন আত্মবিস্মৃত, আত্মঘাতী ও পরাধীনতামূলক বক্তব্যে বাংলাদেশের আপামর জনগণকে যেভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই জাতীয় গর্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

এসব বক্তব্য, ঘটনা ও প্রবণতা কেবল দুঃখজনক নয়, তা জাতীয় আত্মপরিচয়, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক আগ্রাসনের প্রতিচ্ছবি। দেশের সাধারণ মানুষ আজ প্রশ্ন করে—জাতীয় নিরাপত্তা কি কেবল মুখের বুলি, না কি তা বাস্তব কার্যক্রমের মধ্যে সত্যিই প্রতিফলিত হয়? সেনাবাহিনী যখন একদিকে পেশাদারিত্বের কথা বলে, তখন কি তার আরেকদিকে বিদেশমুখী আনুগত্য, পরনির্ভরতামূলক আদর্শ ও সুবিধাবাদের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে না?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ কেবল সেনা সদর দফতর কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নয়, বরং গোটা জাতিকে খুঁজে বের করতে হবে—স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের পরে আমরা আদৌ কতটা স্বাধীন? আর সেই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্ব কতটা সৎ এবং আত্মমর্যাদাশীল? সময় এখন এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার, নীরব থাকার নয়।

তবুও বিতর্ক থেমে নেই। ভারতের একটি শীর্ষ দৈনিকে প্রকাশিত মতামত-নিবন্ধে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আর. পি. এস. ভদৌরিয়া বলেন, ‘‘বেসামরিক-সামরিক সমন্বয়ে ফাঁক তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ সহজ হয়।’’ এই সমন্বয়হীনতায় কে লাভবান এবং কে ক্ষতিগ্রস্ত—তা নিয়েও নানা মহলে জোর আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

এমআইএসটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য শিক্ষকরাষ্ট্রীয় বিনিময়ের পক্ষে যুক্তি দিয়েছে; তাঁদের ভাষায়, ‘‘দেশ–বিদেশের সামরিক শিক্ষকের উপস্থিতি ছাত্রদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।’’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বীকার করেছে যে স্টাফিং-নীতি এবং তথ্য-সুরক্ষা সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে ‘শিক্ষা-সহযোগিতা’ আর ‘গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা’—দুটিই একসঙ্গে সুরক্ষিত থাকে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদিকে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রযুক্তি জ্ঞান শিখে ‘ওয়েস্ট পয়েন্ট’-ধাঁচের একাডেমি গড়ে তুলতে হবে, অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি ন্যূনতম করতে হবে—এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে-কারও পক্ষে শত্রু-মিত্রের পরিচয় একরেখায় টেনে দেখা অবিবেচনাপ্রসূত হতে পারে; তবে স্পষ্ট নীতিমালা, স্বচ্ছ নিয়োগ-প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিই পারে আস্থার ঘাটতি দূর করতে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক খন্দকার আশফাক-উল-ইসলাম মনে করেন, ‘‘বর্তমান উত্তেজিত রাজনৈতিক আবহে সেনা ক্যাম্পাসে বিদেশি অফিশার নিয়োগ সাময়িক স্থগিত রেখে গভীর নিরাপত্তা নিরীক্ষা চালানো যুক্তিযুক্ত হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে প্রযুক্তি-নির্ভর যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য ফাঁসের মূল্যটা জাতিকে দিতে হতে পারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব বড়।’’

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দুই প্রতিবেশী দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থার পরীক্ষাও চলছে, আবার অভ্যন্তরীণ স্বার্থরক্ষার কঠিন ধাঁধাও সমাধান করতে হচ্ছে। ঢাকার নীতিনির্ধারকদের এখন জরুরি করে ভাবতে হবে—সামরিক-শিক্ষা বিনিময়ের সুফল রাখতে গেলে কী ধরনের আইনি ও কাঠামোগত সুরক্ষা বুনে নেওয়া দরকার, যাতে সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে কোনো ধোঁয়াশা না থাকে এবং কূটনৈতিক সহযোগিতাও বিঘ্নিত না হয়।

সময়ই বলে দেবে, এই বিতর্ক কাগুজে আশঙ্কা হয়ে থেমে থাকবে, নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও স্বচ্ছতায় বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা শিক্ষা-ব্যবস্থাকে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। এখন জাতীয় স্বার্থরক্ষার দায়ভার সরকার, সামরিক বাহিনী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব ভূমিকার কাঁধেই সমানভাবে। দেশবাসী প্রত্যাশা করে, সিদ্ধান্ত যাই হোক, তা যেন স্বাধিকার এবং তথ্য–নিরাপত্তার প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান নিশ্চিত করে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫