শিরোনাম :
তেহরানের হৃদয়ে অপারেশন: ইরানের গভীরে ইসরায়েলের নিখুঁত হামলার পেছনের গোয়েন্দা কৌশল উদ্ঘাটন হাইফা বন্দরে ইরানের হামলা: মোদির আদানি খাতায় ‘আগ্নেয়’ ক্ষতির হিসাব শুরু! ১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি: ইতিহাসের নৃশংস বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড ইরান দাবি করল ১৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: যুদ্ধক্ষেত্রের পাল্টা ভারসাম্য না কি মধ্যপ্রাচ্যীয় ভূরাজনীতির নতুন মোড়? মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-ভূমিতে ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ: কূটনৈতিক চাপ, সামরিক বাস্তবতা ও বাংলাদেশের করণীয় সিলেটে উপদেষ্টা বহর আটকে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ঘিরে ভূরাজনৈতিক বার্তা: ভারতের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা ও আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মোড় ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে? মির্জা ফখরুল জানালেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত

সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ওসমানী সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিস’: উদ্দেশ্য, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক ইঙ্গিত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
  • ৪৬ বার

নিজস্ব সংবাদদাতা: ঢাকা, ১৩ই মে’ ২০২৫:

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি থিঙ্ক ট্যাংক “ওসমানী সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিস” প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। নামটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সেনানায়ক এম এ জি ওসমানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হলেও এর পেছনের লক্ষ্য ও সম্পৃক্ততাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানামুখী প্রশ্ন ও বিতর্ক।

নেতৃত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের আস্থাভাজন সাবেক জেনারেল

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজ, যিনি দীর্ঘ সময় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে PSO (Principal Staff Officer) এবং পরে Armed Forces Division (AFD)–তে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবসরের পরও চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি পান, যা সরকারের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার একটি স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজ বর্তমানে ডিজিএফআই-এর পে রোলে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, যা এই থিঙ্ক ট্যাংকটির রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সম্পর্কিত অবস্থানকে আরও জোরদার করে তুলেছে।

বিতর্কিত বৈঠক এবং ‘স্বৈরশাসনের’ অতীত চর্চা

বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা যায় ২০২৫ সালের ৮ মে মাহফুজ একটি প্রকাশ্য বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাশাসনকালে কুখ্যাত এবং বিতর্কিত দুই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা—লেফটেন্যান্ট জেনারেল মামুন খালেদ এবং মেজর জেনারেল রেজা নূর। এই দুই জেনারেলের বিরুদ্ধে রয়েছে:

  • গুম, হত্যা, এবং বরখাস্তের মত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

  • বিপুল অঙ্কের সম্পদের মালিকানার প্রমাণ

  • “আয়না ঘর” নামে পরিচিত এক গোপন নির্যাতন চক্রের নেতৃত্ব

তাদের সঙ্গে মাহফুজের এই বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, নতুন এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান আদতে কি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নাকি রাজনৈতিক পুনর্গঠনের অংশ?

অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা কারা?

এই থিঙ্ক ট্যাংকে যুক্ত আছেন আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সাবেক সেনা কর্মকর্তা:

  • মেজর জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী

  • ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব সারোয়ার

  • ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল রুশো

  • ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউসুফ

উল্লেখ্য, এই প্রতিষ্ঠানের তহবিলের উৎস সরাসরি ডিজিএফআই, যা এটিকে সরকারপন্থী একটি প্রভাবিত থিঙ্ক ট্যাংক হিসেবেই চিহ্নিত করছে।

সরকার ঘনিষ্ঠ চক্রের নিয়ন্ত্রণে?

বিশ্লেষকদের মতে, এই থিঙ্ক ট্যাংকটির মূল উদ্দেশ্য জাতীয় নিরাপত্তার ছদ্মাবরণে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সামরিক চক্রের স্বার্থরক্ষা, এবং বিভিন্ন ফোরামে তাদেরকে ‘নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

এই প্রকল্পে জড়িত আরও তিন বিতর্কিত কর্মকর্তা হলেন:

  • সিজিএস লে. জে. শামীম

  • ডিএমআই ব্রি. জে. আজাদ

  • এএসইউ কমান্ডান্ট ব্রি. জে. শামস

তিনজনকেই জেনারেল ওয়াকারের বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নিরাপত্তা ও শুদ্ধাচার নিয়ে উদ্বেগ

সামরিক সূত্র জানায়, মামুন খালেদ ও রেজা নূরের মতো কর্মকর্তারা আজও সেনানিবাসে অনায়াসে বিচরণ করছেন—যা একদিকে সেনা শৃঙ্খলা, অন্যদিকে জাতির নৈতিক মানদণ্ডে প্রশ্ন তোলে।

এছাড়া, পূর্বে দেশ ছেড়ে পালানো বিতর্কিত কর্মকর্তাদের (যেমন: লে. জে. মুজিব, মে. জে. সাইফ, মে. জে. তাবরেজ, ও মে. জে. হামিদ) পরিবারবর্গ সেনানিবাসে এখনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এর মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরবতা এবং রাজনৈতিক ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষণ: সামরিক গবেষণা নাকি রাজনৈতিক হাতিয়ার?

একটি আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার নামে শুরু হওয়া এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে উঠে আসছে প্রশ্ন—এটি কি আদৌ নিরাপত্তা সংক্রান্ত গবেষণার নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম, নাকি ক্ষমতাসীনদের ‘সামরিক মুখপাত্র’ তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর একটি বড় ধরনের প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫